স্ট্রেস কাকে বলে - স্ট্রেস দূর করার উপায় - স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

প্রিয় পাঠক এই পোস্টে আমরা স্ট্রেস কাকে বলে - স্ট্রেস দূর করার উপায় - স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এসকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। যখন এক বা একাধিক পরিবর্তন বা পরিবর্তনসমূহ ঘটে তখন শরীরের যে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হয় তাকে বলে। আজকের এই পোস্টে স্ট্রেস কাকে বলে - স্ট্রেস দূর করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।

আপনারা যদি স্ট্রেস কাকে বলে - স্ট্রেস দূর করার উপায় - স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ পোস্ট জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন দেরি না করে স্ট্রেস কাকে বলে - স্ট্রেস দূর করার উপায় - স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জেনে নেই। 

স্ট্রেস কাকে বলে

স্ট্রেস কথাটি এখন সব ক্ষেত্রে শোনা যায়। চিকিৎসা বা জীব বিজ্ঞানের আলোকে স্ট্রেস বাচ্চা হল একটি শারীরিক মানসিক আবেগ ময় বিষয় যা মানসিক দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চাপ হতে পারে বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ। অথবা যখন এক বা একাধিক পরিবর্তন ঘটে তখন শরীরের যে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হয় তাকে স্ট্রেস বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ গণঅভ্যুত্থান দিবস কবে পালিত হয় - ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান

কাজের চাপ আর স্ট্রেস আলাদা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোজকার চাপ কিন্তু স্ট্রেস নয়। কোন চাপ কে স্ট্রেস হিসেবে গণ্য করতে সেটার একটা মাত্রা ছাড়াতে হবে। যেমন কম সময়ে বেশি কাজ করা কাজের নির্ভুল থাকার চাপ তীব্র মানসিক আঘাত অশান্তির মধ্যে কাজ করা এসব কারণে স্ট্রেস হতে পারে।

স্ট্রেস দূর করার উপায় - স্ট্রেস কমানোর উপায়

আমরা বিভিন্ন সময়ে স্ট্রেস এ ভুগে থাকি। বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের কারণে স্ট্রেস হতে পারে। স্ট্রেস এর কারণে মানসিক অশান্তি অল্পতেই মেজাজ হারানো, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া এসব হতে পারে। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে যে এর কারণে আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় আসতে পারেন। তাই স্ট্রেস দূর করার উপায় সম্পর্কে আমরা এখন জানব। তাহলে চলুন স্ট্রেস কমানোর উপায় জেনে নেই।

খেলাধুলা ও কায়িক পরিশ্রম করাঃ

খেলাধুলা করা এবং ঘাম ঝরানো কায়িক পরিশ্রম যে শুধু শারীরিক উপকার করে তা নয়। আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে পরিশ্রমের ফলে শরীরের অন্তর্নিহিত বিশেষ রাসায়নিক গুলো ক্ষরিত হতে থাকে। এর কারণে আমাদের হাসিখুশি থাকতে এবং স্ট্রেস মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি স্ট্রেস কমাতে উপায় বা স্ট্রেস দূর করার উপায় খোঁজেন তাহলে নিয়মিত খেলাধুলা ও কায়িক পরিশ্রম করুন।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমঃ

আমরা জানি ঘুম একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর খারাপ হয়। আপনি যদি স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম পাড়ুন। পরিমাণমতো ঘুম স্ট্রেস কে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। নিয়মিত ৭-৮ ঘন্টা ঘুম পাড়া আমাদের সকলের দরকার।

নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়াঃ

আপনি কোন জিনিসটা বেশি পছন্দ করেন সেই জিনিস কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া। নিজের পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে বেশি সময় কাটানো। এক্ষেত্রে নিজের শখ গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। যেমন আপনি যদি বই পড়তে পছন্দ করেন বই পড়বেন যদি ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন তাহলে ঘুরে বেড়াবেন আপনি যে বিষয়টা বেশি পছন্দ করেন সেটা কে বেশি প্রাধান্য দেবেন। এতে করে এমন উৎফুল্ল থাকবে এবং স্ট্রেস থেকে মুক্ত থাকবেন।

আরো পড়ুনঃ কুরবানী করা কি - কুরবানী করা কি ফরজ না ওয়াজিব

নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকাঃ

সঠিক খাবার খেতে হবে এবং নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। যদিও অনেকেই স্ট্রেস কমানোর জন্য শুরুতে নেশা করে থাকে দিন যত যাবে সেই নেশা তার স্ট্রেস এর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই নিজেকে সবসময় নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে রাখতে হবে। নেশা থেকে দূরে থাকা স্ট্রেসকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ইতিবাচক মনোভাব রাখতে হবেঃ

সব সময় ইতিবাচক মনোভাব রাখতে হবে। কারণ ইতিবাচক মনোভাব আপনাকে অনেক স্ট্রেস থেকে মুক্ত দিতে সাহায্য করে। দুশ্চিন্তা এড়াতে হলে শুধুমাত্র আজকের দিনটির কাজ চিন্তা নেই কাটাতে হবে। নেতিবাচক মনোভাব কখনো মনের ভেতরে আনা যাবে না। তাহলে আপনি স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাবেন।

স্ট্রেস এর কারণ

অনেক বিশেষজ্ঞরা বলেন যে স্ট্রেসকে এখন একটি রোগ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। স্ট্রেস বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। আমাদের জীবনের সমস্যা থাকে কারো সমস্যা বড় কারো কারো সমস্যা ছোট। তবে অনেক সময় এই সকল সমস্যার পাশ কাটিয়ে ঢুকে পড়ে দুশ্চিন্তা। স্ট্রেস এর প্রধান কারণগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

আর্থিক সমস্যার কারণে স্ট্রেস হতে পারেঃ

আমাদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য টাকা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। তবে অনেক সময় আমাদের বিভিন্ন কারণে আর্থিক সমস্যা আসে। সে ক্ষেত্রে দেখা যায় আমরা অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই তখন আমাদের স্ট্রেস হতে পারে। কারণ টাকা দুনিয়াতে অতি গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস এর মূল কারণ হিসেবে এটা বলতে পারেন।

কাজের চাপঃ

বিশেষ করে বেসরকারি চাকরিতে একটু বেশি চাপ থাকে। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা অধিক চাপ নিতে পারে না। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত একটানা কাজ করতে থাকে বিশ্রাম নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই আবার কাজ খারাপ হওয়ার একটা ভয় থাকে। একটা সুন্দর জীবন যাপনের ব্যাহত ঘটে। এক্ষেত্রে মানুষ স্ট্রেস চলে আসে। এটি একটি প্রধান কারণ হতে পারে।

সংসার ভাঙনের কারণেঃ

এখনকার সময়ে সংসার ভাঙ্গা একটা কমন বিষয়। আমাদের সমাজে অহরহ এরকম দেখতে পাই। অনেকদিনের সম্পর্ক যখন শেষ হয়ে যায় তখন মানুষ একটা মানসিক সমস্যায় চলে আসে। এ কারণে মানুষ স্ট্রেস এ আসতে পারে।

পারিবারিক সমস্যাঃ

আমরা সকলেই জানি যে আমরা একটা পরিবারের মধ্যে ছোট থেকে বড় হই। সেখানকার দেওয়া শিক্ষা আচার-আচরণ এগুলো আমাদের মধ্যে প্রকাশ পায়। আবার পরিবারে অনেক সময় বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে মানসিক দুশ্চিন্তা চলে আসে। এটি একটি প্রধান কারণ হতে পারে।

বেকার থাকা বা চাকরি না পাওয়াঃ

আমাদের সমাজে এরকম অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি রয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছে কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে পরিবার সমাজ অনেক মানুষ অনেক রকম কথা বলে থাকে। এগুলো সহ্য করতে করতে মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই।

স্ট্রেস এর লক্ষণ

আপনারা যারা আমাদের এই পোস্টটি পড়ছেন স্ট্রেস কাকে বলে - স্ট্রেস দূর করার উপায় সম্পর্কে জানার জন্য পড়ছেন। আপনাদের জন্য উপরে এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এখন আমরা স্ট্রেস এর লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানব। আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার মানসিক দুশ্চিন্তা হয়েছে তাহলে চলুন স্ট্রেস এর লক্ষণগুলো জেনে নেই।

রাতে ঘুম না আসাঃ

আপনি যদি স্ট্রেস এ থাকেন তাহলে রাতে যখন ঘুমাতে যাবেন সহজে ঘুম আসবে না। ঘুমানোর চেষ্টা করবেন কিন্তু সহজে ঘুম আসবে না একটা দুশ্চিন্তা মনের ভেতর সব সময় কাজ করবে। এটি স্ট্রেস এর অন্যতম একটি লক্ষণ।

বুক ধড়ফড় করাঃ

যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের বুক সবসময় ধরফর করবে। কারণ হার্টের বিভিন্ন রকম সমস্যা মানসিক চাপের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সে ক্ষেত্রে আপনি বেশি দেরি করবেন না যত তাড়াতাড়ি পারবেন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

হজমের সমস্যাঃ

অনেক সময় আমাদের বদহজম হতে পারে এর কারণ হলো আপনি নিশ্চয়ই কোন ধরনের মানসিক চাপে রয়েছেন। কারণ আমাদের মাথা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। তাই মানসিক চাপের প্রভাব বেশিরভাগ মাথায় পড়ে। সেখান থেকে শরীরের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়।

আরো পড়ুনঃ লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা - লিচুর পুষ্টিগুণ

মাইগ্রেনের সমস্যাঃ

অনেক সময় আমরা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগে থাকি। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন এর মূল কারণ হলো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা। যতদিন না আপনি স্ট্রেস মুক্ত হচ্ছেন মাইগ্রেশনের সমস্যা থাকবেই।

ক্লান্তিঃ

মানসিক চাপের পরিমাণ যদি অনেক বেশি থাকে তাহলে শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। একটু কাজ করলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি মানসিক চাপ বেশী থাকলে শরীরে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায়।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

স্ট্রেস এক ধরনের শারীরিক মানসিক ও আবেগ সংক্রান্ত যা শারীরিক বা মানসিক টেনশন এর সৃষ্টি করে। স্ট্রেসের সবথেকে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন রিচার্ড এস. লাজারাস, সেটি হল "স্ট্রেস নামক অনুভূতি তখন অনুভূত হয় যখন কেউ অনুধাবন করে যে চাহিদা গুলো তার কার্যকরী ব্যক্তিগত ও সামাজিক সক্ষমতাকে অতিক্রম করেছে"

একজন ব্যক্তির জন্য স্ট্রেস খুব ভালো নয় আবার খুব খারাপও নয়। স্ট্রেস দুই ধরনের হতে পারে ইউস্ট্রেস বা পজেটিভ স্ট্রেস এবং নেগেটিভ স্ট্রেস। পজিটিভ স্ট্রেসে জীবনের চ্যালেঞ্জ এবং উত্তেজনা থাকে। এ ধরনের মানসিক কার্যক্রম ব্যক্তিজীবনে বিদ্যমান থাকলে তা স্বাস্থ্যকর এবং ভালো। তবে এই স্ট্রেস যখন ব্যক্তিকে অনেক বেশি উত্তেজিত করে ফেলে তখন তাকে নেগেটিভ স্ট্রেস বলে এবং এটি মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

শেষ কথাঃ স্ট্রেস কাকে বলে - স্ট্রেস দূর করার উপায় - স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

আপনারা যারা স্ট্রেস কাকে বলে - স্ট্রেস দূর করার উপায় - স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম তাদের জন্য উপরে এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে স্ট্রেস সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে যাবেন। এবং স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যেসব উপায় উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো মেনে চলুন।

তাহলে আপনি স্ট্রেস মুক্ত থাকতে পারবেন। জীবনের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য স্ট্রেস মুক্ত থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম পোস্ট আরও পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Rajrafi.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url