প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি

আপনি কি প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি সে সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আমি আজকের আর্টিকেলে প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি এবং ইউরিন ইনফেকশনের কারণ, ইউরিন ইনফেকশন হলে খাবার, ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধ ইউরিন ইনফেকশন টেস্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। তাই টেনে টেনে না ভোরে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।

প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি এ সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে আসি প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি এ সম্পর্কে।

পেইজ সূচিপত্রঃ প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি

ইউরিন ইনফেকশনের কারণ

বিভিন্ন কারণে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। ইউরিন ইনফেকশন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া জনিত সমস্যা। ব্যাকটেরিয়া বাইরে থেকে ভিতর যে সমস্যা তৈরি করে। নিয়মিত গোসল না করা, গোপনাঙ্গ পরিষ্কার না রাখা, প্রস্রাব করে পানি না নেওয়া, অল্প পরিমাণে পানি খাওয়া, খুব টাইট অন্তর্বাস পরা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ইনফেকশন হতে পারে।

এমন অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত গোসল করেনা তাদের ক্ষেত্রে ইউরিন ইনফেকশন বেশি হতে পারে। প্রতিনিয়ত গোসল না করলে শরীরে ব্যাকটেরিয়া থেকে যায় আর এই ব্যাকটেরিয়া ইউরিন ইনফেকশন ঘটাতে সাহায্য করে।

ইউরিন ইনফেকশন নারী ও পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই যৌনাঙ্গ পরিষ্কার না থাকে তাহলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। ইউরিন ইনফেকশন যেহেতু ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের ফলে হয় সেজন্য এই কারণে ইউরিন ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।

গোসল করার পর বা প্রস্রাব করার পরে কেউ যদি তার গোপনাঙ্গ ভালোভাবে পরিষ্কার না করে তাহলে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। আবার প্রস্রাব করার পরে যদি কেউ পানি না নেয় তাহলে সেখানে প্রস্রাব লেগে থাকে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয় এবং সেই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়ে ইউরিন ইনফেকশন ঘটায়।
এছাড়াও যারা খুব কম পরিমাণে পানি খায় তাদের ইউরিন ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। শরীরে পানি শূন্যতার কারণে এ সমস্যা হয়। আবার দেখা যায় যে অনেকে খুব টাইট টাইট পোশাক পরে। এরকম অত্যাধিক টাইট পোশাক পরার কারনে গোপনাঙ্গের ঘাম তৈরি হয় যার ফলে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ইউরিন ইনফেকশন হয়।

এছাড়াও এরকম আরো অনেক অনেক ছোট ছোট কারণ রয়েছে যেগুলো আমরা গুরুত্ব দিই না কিন্তু সেগুলো থেকে ব্যাকটেরিয়া জনিত সমস্যা ইউরিন ইনফেকশন হয়ে যায়। এসব যদিও মনে হয় ছোট ছোট কারণ কিন্তু এগুলো থেকে অনেক বড় বড় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

আশা করি এই সেকশন পাঠের পরে আপনার আর বুঝতে বাকি নেই যে ইউরিন ইনফেকশনের কারণ কি হতে পারে। আমরা ইউরিন ইনফেকশনের কারণ দেখলাম এবার চলুন প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি দেখে নিই।

প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি

প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি তা জানতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে প্রস্রাবের ইনফেকশন কেন হয়। উপরের সেকশনে তা আমরা জেনে এসেছি। এখন আমরা প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি তা দেখব।

প্রসাবের ইনফেকশনের লক্ষণ হচ্ছে-
  • প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া ও ব্যথা অনুভব করা
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, রাতে বেশি বেশি প্রস্রাব হওয়া
  • দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হওয়া
  • প্রস্রাব ঘোলাটে হাওয়া
  • হঠাৎ করে প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং প্রস্রাব আটকে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়া
  • হঠাৎ করে জ্বর আসা এবং শরীরে কাঁপুনি ধরা
  • রক্ত প্রস্রাব হওয়া
  • তলপেটে প্রচুর ব্যথা হওয়া
  • কোমরের পেছনে পাঁজরের অংশে ব্যথা অনুভব করা
  • ক্লান্তি ও বমি-বমি অনুভব করা
  • শরীরের তাপমাত্রা 36 ডিগ্রি নিচে নেমে যাওয়া
সাধারণত প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি বললে এইসবই ধরা যায়। তবে বয়সভেদে প্রস্রাবের ইনফেকশনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম লক্ষ্য দেখা যায়।যেমন বয়স্কদের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়ঃ-
  • অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যায়
  • মানসিক অশান্তি,ক্ষোভ,রাগ
  • প্রসাব বের হয়ে কাপড় নষ্ট হয়ে যাওয়া
  • শরীরে কাঁপুনি ও প্রস্রাবের পরে ঝাকুনি দেওয়া
এসব ছিল বয়স্ক লোকের প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো। এছাড়াও দেখে নিই বাচ্চাদের প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো কি কি-
  • মেজাজ খিটখিটে হওয়া
  • শরীরে জ্বর আসে, হঠাৎ শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া এবং বিছানায় প্রস্রাব করে দেওয়া
  • বমি হওয়া
  • ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করা
উল্লেখিত লক্ষণগুলো যদি বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায় তাহলে বুঝে নিতে হবে বাচ্চাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়েছে। এছাড়াও কিছু প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।সেগুলো হলো-
  • শরীরের তাপমাত্রা উত্তর দিক বেড়ে যাওয়া এবং শরীর কাপুনি ঝাকুনি দেওয়া
  • শরীরের তাপমাত্রা 36 ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়া
  • মানসিক বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া
  • তলপেটে এবং কোমরের পেছনে পাঁজরের অংশে প্রচন্ড ব্যথা করা
  • প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া
এই মারাত্মক লক্ষণগুলো যদি দেখা দেয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ এবং চিকিৎসা নেওয়া উচিত। তাহলে এখান থেকে বড় রকমের সমস্যা হয়ে যেতে পারে। তাই আগে থেকে সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত।

এতক্ষণ আমরা প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি তা দেখলাম। আশা করি এই সেকশনটি পাঠ করার পর আপনি ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন যে প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি হতে পারে। এখন আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা হচ্ছে ইউরিন ইনফেকশন হলে খাবার কি খেতে হবে। চলুন দেরী না করে দেখে নিই।

ইউরিন ইনফেকশন হলে খাবার

ইউরিন ইনফেকশন মারাত্মক একটি সমস্যা। ইউরিন ইনফেকশন হলে চুপ করে বসে থাকলে বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যেতে পারে। ইউরিন ইনফেকশন হলে মানুষের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ইউরিন ইনফেকশন হলে সব সময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

কফি, অ্যালকোহল এবং ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। ইউরিন ইনফেকশন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত যেসব খাবার খাওয়া যাবে না কেননা এ খাবারগুলো মূত্র স্থলে ইনফেকশন ঘটাতে পারে। চিনিযুক্ত ও মসলাজাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে কেননা এগুলো মূত্রাশয়ে সংক্রমণের সৃষ্টি করে।

ইউরিন ইনফেকশনের সময়ে লেবু ও কমলা অর্থাৎ সাইট্রিক এসিড জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে কেননা এগুলো ইউরিন ইনফেকশনের জন্য দায়ী হতে পারে। ইউরিন ইনফেকশন ভালো করতে কাঁচা মরিচ,সবুজ শাক, পালং শাক, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফলমূল খেতে পারেন।

ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ইউরিন ইনফেকশনের সময় পানির বিকল্প নেই। ইউরিন ইনফেকশন হলে আপনি যে আম খেতে পারেন কারণ জাম ব্যাকটেরিয়াকে শরীরে থাকতে দেয় না। শরীরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে বের করে ফেলতে সাহায্য করে।

ইউরিন ইনফেকশন হলে আপনি দই খেতে পারেন। কারণ দেয়া থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া শরীরে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। যেসব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ইউরিন ইনফেকশনের জন্য দায়ী সেসব প্রিয়াকে দূরে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া খুব সহজে ধ্বংস করে ফেলতে পারে।
এছাড়াও ইউরিন ইনফেকশন হলে আপনি ক্রানবেরি জুস খেতে পারেন। ক্রানবেরি জুস খেলে যেসব ব্যাকটেরিয়ার কারণে ইউরিন ইনফেকশন হয় যেসব ব্যাকটেরিয়া শরীর থেকে দূরীকরণে বেশ সহায়তা করে ক্যানবেরি জুস।

এছাড়া মূত্রনালির ফ্রেশ রাখতে বা ইউরিন ইনফেকশন হতে বাঁচতে আপনি ডাবের পানি খেতে পারেন। ডাবের পানি মূত্রনালীকে ফ্রেশ রাখে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে ইউরিন ইনফেকশনের হাত থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারে।

আশা করি এই সেকশন পাঠ করে জানতে পারলেন ইউরিন ইনফেকশন হলে খাবার কি কি খেতে হবে। ইউরিন ইনফেকশনের হাত থেকে বাঁচতে গেলে আপনাকে অবশ্যই এই ধরনের খাবার গ্রহণ করতেই হবে। এবার যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা হচ্ছে ইউরিন ইনফেকশন ঔষধ নিইয়ে।

ইউরিন ইনফেকশন ঔষধ

ইউরিন ইনফেকশন একটি মারাত্মক সমস্যা। বেশি দিন এই সমস্যা শরীরে থাকলে মানুষের কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। সেজন্য ইউরিন ইনফেকশন থেকে বাঁচতে ইউরিন ইনফেকশন হয়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ নিতে হবে।

ইউরিন ইফকেশনের বেশ কিছু ঔষধ রয়েছে যেগুলো ইউরিন ইনফেকশন সংক্রমণ হলে রোগীদের খেতে হয়। সেগুলো হচ্ছে-টাইমেথ্রোপ্রিম-সালফামেথোক্সাজল,নাইট্রোফির‍্যানটয়িন, ফসফোমাইসিন ইত্যাদি খেলে ইউরিন ইনফেকশন ভালো হয়।

তবে ভালো হয় নিজে নিজে কোন ঔষধ না খেয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডাক্তার যে ঔষধ খেতে বলবে সেগুলো খাওয়া। ইউরিন ইনফেকশন যদি জটিল পর্যায়ে চলে যায় তাহলে আপনাকে অবশ্যই ঔষধ খেতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। তবে যদি সামান্য পর্যায়ে হয় তাহলে সামান্য ঔষধ পুষ্টিকর খাবার খেলেই ভাল হয়ে যায়।

ইউরিন ইনফেকশন টেস্ট

আমরা উপরের সেকশনে জেনে এসেছি প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি। এই ধরনের লক্ষণ যদি শরীরের মধ্যে অনুভব করা যায় বা লক্ষ্য করা যায় তাহলে অবশ্যই ইউরিন ইনফেকশন টেস্ট করাতে হবে। এসব লক্ষণ দেখেও যদি চুপ করে বসে থাকেন তাহলে পরবর্তীতে বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যেতে পারে।

তাই মূত্রনালীতে জ্বালাপোড়া বা অন্যান্য যেসব লক্ষণ রয়েছে সেসব লক্ষণ যদি চোখে পড়ে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান এবং ইউরিন ইনফেকশন টেস্ট করুন। তা না হলে পরবর্তীতে বড় রকমের বিপদে পড়তে পারেন। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছন।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন এবং প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি সে সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন এবং ইউরিন ইনফেকশনের কারণ ইউরিন ইনফেকশন হলে খাবার কি হতে পারে সেগুলো সম্পর্কে জেনেছেন। এই বিষয়ে আপনার যদি কোন মতামত বা জানার কিছু থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দিবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Rajrafi.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url