নামাজ কবুল হওয়ার কারণ - নামাজে ভুল হলে করণীয়

আজ আমরা আলোচনা করতে চলেছি নামাজ কবুল হওয়ার কারণ কি এ বিষয়ে। বড় বড় আলেমদের মতে নামাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই সালাম ফিরালে নামাজের আকার আরো বৃদ্ধি পায়। আমাদের পাঠকের মধ্য থেকে অনেকেই প্রশ্ন করেন নামাজ ভুল হলে করণীয় কি এবং নামাজ কবুল হওয়ার কারণ কি কি এ বিষয়ে। তাহলে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে আসি নামাজ কবুল হওয়ার কারণ গুলো সম্পর্কে।
নামাজ কবুল হওয়ার কারণ - নামাজে ভুল হলে করণীয়
নামাজ কবুল হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হলো সহি শুদ্ধভাবে নামাজ পড়া। বিভিন্ন আলেমগণের মতে নামাজ কবুল হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নামাজের নিয়ম গুলো সঠিক পালন। প্রিয় পাঠক শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকুন নামাজ কবুল হওয়ার কারণগুলি সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন ইনশাল্লাহ ।

পেজ সূচিপত্রঃ নামাজ কবুল হওয়ার কারণ - নামাজে ভুল হলে করণীয়

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক আপনি কি জানেন নিয়মিত নামাজ পড়ার কারণে মানসিক প্রশান্তি সৃষ্টি হয়। মহান আল্লাহতালার নৈকট্য পেতে হলে মানসিকভাবে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে এবং জীবনে সফলতা পেতে হলে অবশ্যই নামাজ আদায় করা প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে সৎ পথে সঠিক উপায়ে জীবন যাপন করতে হলে অবশ্যই নামাজ আদায় করা প্রয়োজন। নামাজ মানুষকে সকল পাপাচার থেকে বিরত রাখে।

আমরা যদি আমাদের প্রতিদিনের কাজের পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি তাহলে ইহকালের কাজের পাশাপাশি পরকালের জন্য সঞ্চিত হবে অমূল্য সম্পদ। নামাজ কবুল হওয়ার কারণ এবং যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। আজকে এই পুরো আর্টিকেলের মাধ্যমে আলোচনা করা হবে নামাজ কবুল হওয়ার কারণ , নামাজে ভুল হলে করণীয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ কয়টি এবং যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয় ইত্যাদি সকল বিষয় এ।

নামাজ কবুল হওয়ার কারণ - নামাজে ভুল হলে করণীয়

মুসলমান হওয়ার এবং নামাজের শর্ত সমূহ নিচে আলোচনা করা হলো। এই শর্তগুলো পূরণ করলে নামাজ কবুল হবে। 

  • বুঝদার হওয়ার বয়সে পদার্পণ করে শরীয়তের সকল বিধান উপলব্ধি এবং সঠিকভাবে গ্রহণ করতে হবে।
  • যে বয়সে গিয়ে ভালো খারাপ এর বিচার করা সম্ভব সে বয়সে উপনীত হতে হবে। 
  • নিজের পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে।
  • নাপাকি বিভিন্ন বস্তু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
  • ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী সতর ঢাকা আইন মানতে হবে।
  • কিবলামুখী হয়ে সঠিক নির্দেশনা অবলম্বন করে সালাত আদায় করতে হবে।

নামাজের ভুল হলে করণীয় কাজগুলো কি এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো। নামাজে দুয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে যদি সালাম ফেরানো হয় তাহলে এটি সালাত বৃদ্ধি করার অন্তর্গত হবে। নামাজ শেষ হওয়ার অনেক পরে যদি এই ভুলের কথা মনে পড়ে সেক্ষেত্রে পুনরায় নামাজ পড়া উত্তম। কিন্তু যদি নামাজরত অবস্থায় বা নামাজ শেষ হওয়ার ২-১ মিনিটের মধ্যে এই ভুলের কথা উপলব্ধি হয় সেক্ষেত্রে বাকি নামাজ আদায় করে সাহু সেজদার মাধ্যমে নামাজের সমাপ্ত করতে হবে।
ওয়াজিব নামাজের ক্ষেত্রে যদি ভুল হয় এবং নামাজের স্থান পরিত্যাগের পূর্বেই যদি নামাজের সেই ভুলের কথা মনে পড়ে সেক্ষেত্রে পুনরায় সালাত আদায় করতে হবে সাহ সিজদা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয় - নামাজে প্রচলিত ভুল ত্রুটি

নামাজের ক্ষেত্রে কিছু গুরুতর ভুলের কারণে নামাজ ভেঙ্গে যায় বা নামাজ হয় না। নামাজে প্রচলিত কিছু ভুল ত্রুটি রয়েছে যার কারণে নামাজ কবুল হয় না। আজ আমরা আলোচনা করতে চলেছি যে সকল কারণে নামাজ ভেঙ্গে যায় সে সকল বিষয়ে। নামাজে অশুদ্ধ সুরা পাঠ করা হলে যদি কোরআনের অর্থ বা উদ্দেশ্য পরিবর্তন হয়ে যায় সেক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে।(ফাতাওয়ায়ে শামিঃ ১/৬৩৩-৬৩৪)।

নামাজের ভেতরে যদি কথা বলা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়। নামাজের ভিতরে এমন কোন শব্দ করা হয় যদি যে শব্দের নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে সেক্ষেত্রে অবশ্যই নামাজ ভঙ্গ হবে এবং পুনরায় নামাজ পড়তে হবে। নামাজরত অবস্থায় যদি কোন লোককে সালাম দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে নামাজ ভেঙ্গে যায়। কোন ব্যথা কিংবা দুঃখের কারণে নামাজের ভেতরে আর্তনাদ করলে নামাজ ভঙ্গ হয়। 

নামাজে প্রচলিত ভুল ত্রুটি গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলোঃ কোন মুসল্লি যদি ফরজ নামাজ চলাকালীন সুন্নত নামাজ আদায় করে সেক্ষেত্রে এই নামাজ হবে না। পবিত্র হাদীস শরীফে এই কাজকে নিষিদ্ধ বা হারাম হিসাবে বলা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যখন জামাতের ইকামত হয়ে যায় তখন ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্য কোন নামাজ নেই (মুসলিমঃ ৭১০)।

নামাজ কেন কবুল হয় না - নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব সমূহ

নামাজ কবুল হওয়ার নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে যা প্রতিটি মুসল্লিকে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে পালন করতে হয়। তবে যে সকল কারণে নামাজ কবুল হয় না সে সকল বিষয় নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

  • যদি লোক দেখানো নামাজ পড়া হয় সেক্ষেত্রে নামাজ কবুল হয় না।
  • বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর শেখানো নিয়ম এর লংঘন করে নামাজ আদায় করলে নামাজ কবুল হবে না।
  • নামাজের ভিতরে যদি খুশু খুজু না থাকে সেক্ষেত্রে নামাজ কবুল হয় না।
  • হারাম রুজি ভক্ষণ করলে সেই বান্দার নামাজ কবুল হয় না।
  • দায়বদ্ধ হয়ে নামাজ পড়লে নামাজ কবুল হয় না।
  • মানুষ দেখানো ইবাদত করলে ইবাদত কখনো কবুল হবে না।
  • নামাজের মধ্যে ধীরস্থিরতা না থাকলে নামাজ কবুল হবে না।
  • নামাজের সঠিক ভাবে সূরা পাট না করলে নামাজ কবুল হবে না।

নামাজের কিছু ফরজ ও ওয়াজিব কাজ রয়েছে সেই কাজগুলো হলঃ অবশ্যই শরীর পাক করতে হবে যদি অজু করার মাধ্যমে শরীর পাক হয়ে যায় তাহলে অজু করতে হবে যদি গোসলের প্রয়োজন পড়ে সে ক্ষেত্রে গোসল করতে হবে। যে কাপড় পরিধান করে নামাজ আদায় করা হবে অবশ্যই সে কাপড় পবিত্র হতে হবে অর্থাৎ সে কাপড়ে কোন ধরনের নাপাক বস্তু লেগে থাকা যাবে না।
এছাড়া নামাজের ভেতরে সাতটি ফরজ বিদ্যমান রয়েছে যেগুলোকে বলা হয়ে থাকে নামাজের আরকান বা স্তম্ভ অথবা খুঁটিও বলা যেতে পারে। এছাড়া নামাজের বাইরের নয়টি ফরজ রয়েছে যাকে নামাজের শর্ত বলা হয়ে থাকে। এই স্তম্ভ এবং শর্তগুলো নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই জেনে রাখা উচিত। যার একটি ও বাদ পড়লে নামাজ সঠিক হবে না।

নামাজের ওয়াজিব ছুটে গেলে কি হয় - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ কয়টি

যদি নামাজরত অবস্থায় ভুলক্রমে নামাজের ওয়াজিব ছুটে যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সাহু সিজদা আদায় করতে হবে যদি সাহ সিজদা আদায় না করা হয় তাহলে নামাজ হবে না। আর যদি সাহস সিজদা আদায় করার কথা মনে না আসে সেক্ষেত্রে পুনরায় নামাজ প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। শাহ সিজদা দিতে হলে কিছু নিয়ম অবলম্বন করতে হবে।

যেমনঃ নামাজের শেষ রাকাতে আত্তাহিয়াতু পড়ে ডানদিকে সালাম ফিরানোর পরে দুইটি সিজদা দিতে হবে। দুইটি সিজদার মাঝখানে অবশ্যই এক তাজবি পরিমাণ সোজা হয়ে বসতে হবে। এরপরে নামাজের রীতি অনুযায়ী আত্তাহিয়াতু দরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ সমাপ্ত করতে হবে।
নামাজ আদায় করার সময় যদি নামাজের কোন ফরজ ছুটে যায় বা বাদ পড়ে সে ক্ষেত্রে পুনরায় নামাজ পড়তে হবে এই বিষয়ে কখনোই সাহ সিজদা কাজে আসবে না। নামাজের মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহতালার চরণে সেজদা দেয়। মহান আল্লাহ তালার খুব নিকটে চলে যায় বান্দা নামাজের মাধ্যমে। 

মহান আল্লাহ তা'আলা মুসলমানের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ করেছেন। নামাজের ওয়াক্ত গুলো হলঃ ফজর,যোহর, আসর, মাগরিব , এশা।

নামাজের ওয়াজিব কয়টি - নামাজের ফরজ কি কি

নামাজের ওয়াজিব কাজগুলো বলতে ঐ সকল কাজকে বোঝানো হয়েছে যে সকল কাজের যে কোন একটি যদি নামাজ রত অবস্থায় ছুটে যায় সে ক্ষেত্রে সাহু সিজদা আদায় করতে হয়। এছাড়া যদি সাহ সিজদা আদায় করতে ভুলে যায় সেক্ষেত্রে পুনরায় নামাজ পড়তে হবে। এইজন্য বলা হয়ে থাকে নামাজের ওয়াজিব আদায় না করলে কখনোই নামাজ হবে না।

এজন্য অবশ্যই প্রতিটি মুসলিমের নামাজের ক্ষেত্রে ওয়াজিবের দিকে বিশেষ লক্ষ্য দিতে হবে যেন ভুল না হয়। আপনি কি জানেন নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি? ফরজ বলতে নামাজের এমন কিছু অংশকে বোঝানো হয়েছে যা পালন করা অত্যাবশ্যকীয়। নামাজের ফরজ যদি আপনি না মানেন সে ক্ষেত্রে আপনার নামাজ সঠিক নয় বলে গণ্য হবে না।
সর্বপ্রথম নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে জানতে হবে নামাজের কোন বিষয়গুলো পালন করা অত্যাবশ্যকীয়। আপনি যদি সঠিকভাবে নামাজের ফরজ বিষয়গুলো সম্পর্কে না জানেন সে ক্ষেত্রে আপনার ইবাদত মহান আল্লাহতালার কাছে কবুলযোগ্য ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না।

শেষ কথাঃ নামাজ কবুল হওয়ার কারণ - নামাজে ভুল হলে করণীয়

আশা করি নামাজ কবুল হওয়ার কারণ কি হতে পারে এ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা প্রদর্শন করতে পেরেছি। আপনারা যারা নামাজ কবুল হওয়ার কারণ কি  এবংনামাজে ভুল হলে করণীয় কি এ  সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন তাদের জন্য উপরের পোস্ট টি লেখা হয়েছে। এছাড়া  নামাজের ওয়াজিব কয়টি এ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই পোষ্ট টি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

নামাজ কবুল হওয়ার কারণ সম্পর্কে কারো কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে সেই প্রশ্ন করতে পারেন।আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন এবং নতুন আপডেট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Rajrafi.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url