১২ রবিউল আউয়াল ২০২৩ - ১২ রবিউল আউয়াল এর আমল

প্রতিটি মুসলমানের ১২ই রবিউল আউয়াল ২০২৩ সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন। ১২ রবিউল আউয়াল হল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন এবং মৃত্যুদিন। সাধারণত এই দিনে পুরো মুসলিম উম্মাহ নফল নামাজ আদায় দরুদ শরীফ পাঠ করে থাকেন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ১২ রবিউল আউয়াল ২০২৩ এবং রবিউল আউয়াল মাসের আমল সম্পর্কে।

এছাড়া ১২ রবিউল আউয়াল ২০২৩ , জশনে জুলুস অর্থ কি, ১২ রবিউল আউয়াল এর ফজিলত ,১২ রবিউল আউয়াল এর আমল ইত্যাদি সকল বিষয়ে জানতে পারবেন। তাই আমাদের সাথে থাকুন।

১২ রবিউল আউয়াল ২০২৩ বাংলাদেশে এবার অনুষ্ঠিত হবে অক্টোবর মাসের ৯ তারিখ রবিবারে। অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ রোজ শনিবার দিবাগত রাত্রি থেকে রবিউল আউয়াল পালন করা হবে ৯ তারিখ দিবাগত রাত্রি পর্যন্ত। বিভিন্ন আলেমগণের মধ্যে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে।

অনেক হাদিস বিশারদদের মতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ হয়েছে। যে সকল জীবনীকার বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন কাহিনী লিখেছিলেন তার মধ্য থেকে প্রথম কাতারের জীবনী কারদের মধ্যে ইসাহক একজন ছিলেন। ঈসা হক বলেন ১২ই রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, খণ্ড-১, পৃ. ১৫৮)।

বিশ্বনবীর জন্মের মাধ্যমে শান্তির ধর্ম প্রচারের আরম্ভ হয়। আই এম এ জাহেলিয়াতের যুগে শান্তির ধর্ম ইসলামকে মানবজাতির কাছে পৌঁছানোর জন্য পৃথিবীতে এসেছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আরবি শব্দ জলসা শব্দের বহুবচন হল বসা উপদেশ যাত্রা মিছিল ইত্যাদি এই শব্দ থেকেই জুসনে জুলুসের উৎপত্তি যার অর্থ হল আনন্দ মিছিল বা আনন্দ শোভাযাত্রা।

প্রতিটি মানুষের জীবন মূল্যবান। যে মানুষ তার জীবনে সঠিক কার্য করে জীবন পরিচালনা করেছে সে মানুষ অবশ্যই জীবনে সফল হয়েছে। অপরদিকে যে মানুষ সময়ের অপচয় করেছে তার জীবনের আয়ু অযথা নষ্ট করেছে সে ব্যর্থ। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে মহান আল্লাহতালা বলেন সময়ের শপথ সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত শুধু সে সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত নয় যারা ঈমান আনয়ন করেছে এবং সৎকর্ম করে এবং সত্যের উপর দেশ দেয় এবং ধৈর্য ধারণে উৎসাহিত করে থাকে।(সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)। 

রবিউস সানি মাসের ফজিলত গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রতি সপ্তাহের কিছু আমল এবং প্রতিমাসের কিছু আমল পালন করা হাদিস অনুযায়ী। রবিউস সানি মাসের আমল গুলোর মধ্যে প্রতিচন্দ্র মাসের 13,14,15 তারিখে রোজা রাখা যেতে পারে। হাদিস শরীফে রবিউস সানি মাসের আমল সম্পর্কে তেমন কিছু বিস্তারিত বলা নেই।

তবে কিছু কিছু কিতাবের বিভিন্ন নামাজ ও আমলের কথা উল্লেখ রয়েছে যা আলেমগণ সমর্থন করে না। সেই সকল ভিত্তিহীন ইবাদতের মধ্যে রয়েছে রবিউস সানি মাসে নতুন চাঁদ দেখা মাগরিবের নামাজের পর দুই রাকাত করে মোট আট রাকাত নফল নামাজ পড়তেন এছাড়া প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহা এবং সূরা ইখলাস পড়তে হবে।

সুলাইমান বিন সুরাদ হলো ইমাম আলী রাঃ এর অনুসারী। ইমাম হুসাইন যেই যুদ্ধে ইমাম আলীর আঃ এর পক্ষ থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন সেই যুদ্ধে ইমাম হুসাইন শাহাদাত বরণ করেন। এরপরে আইনুল ওয়ারদা নামক স্থানে ইবনে জিয়াদের বিরুদ্ধে সালমান বিন সুরাজ ৬৫ হিজরীতে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং ৯৩ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন।

তার সৈন্যদের মধ্যে 27 জন ব্যতীত সকলেই শাহাদত বরণ করেছিলেন। (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩) ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী আরবি নতুন মাস এবং সপ্তাহের জন্য এমন কিছু আমল রয়েছে যা প্রতিটি মুমিনের পালন করা উত্তম। যেমন রবিউস সানি মাসের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা উত্তম। এই রোজার বিশেষ কিছু ফজিলত রয়েছে এবং ইসলাম এটি অনুমোদন দেয়।

রোজা রাখা বিষয়ে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন বান্দার আমল সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে পেশ করা হয় আর আমি চাই আমার আমল রোজা রাখা অবস্থায় আল্লাহর কাছে পেশ করা হোক। (তিরমিজি: ৭৪৭)

১২ রবিউল আউয়াল এর ফজিলত

রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশে পাপ মোচনের জন্য আলোর দিশারী হয়ে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এমন একটি নাম যা প্রত্যেক মুসলমান খুব সম্মানের সহিত স্মরণ করেন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উপর নাযিল হয় পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন।

আমলের দিক দিয়ে মুমিন বা মুসলমানদের মধ্যে যতই কমতি থাকুক না কেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত বা ভালোবাসার কোন কমতি নেই মুসলিমদের অন্তরে। রসুলের প্রতি মহব্বতের তুলনা নেই মুমিনদের কাছে। একজন মুমিনের মনে মহান আল্লাহতালার প্রতি যতটুকু মহব্বত থাকে ততটুকুই মহব্বত থাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।

মহান আল্লাহতালা নিজে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর প্রতি দরুদ এবং সালাম পেশ করেন। আওয়াল মাসের ১২ তারিখ যেহেতু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত এই দিনে নফল ইবাদত করা। দুরুদ শরীফ পাঠ করা। এছাড়া প্রাণ খুলে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের জন্য দোয়া করা।

মুসলিম সমাজের সূচনার জন্য আইয়ামে জাহিলিয়াতের অন্ধকার যুগ থেকে মানবজাতিকে আলোর পথ প্রদর্শনের জন্য জন্ম হয় বিশ্ব মানবের যার নাম বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন তোমরা ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন বাবা-মা সকলকে ভালবাসবে তবে কারো ভালোবাসা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর চেয়ে অধিক যেন না হয়। বিশ্ব নবীকে অন্তরে স্বীকার করে তার দেখানো পথে জীবন অতিবাহিত করলে একজন মানুষ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে।