দুর্গাপূজার ইতিহাস - দুর্গা পূজা 2023 সময় সূচি
প্রিয় পাঠক আপনি কি জানেন দুর্গাপূজার ইতিহাস সম্পর্কে? আজ আমরা আলোচনা
করতে চলেছি দুর্গাপূজার ইতিহাস এবং দূর্গা পূজা ২০২৩ ইংরেজি কত তারিখ এ
সকল বিষয়। আমাদের পাঠকদের মধ্যে থেকে অনেকে আমাদের প্রশ্ন করে
থাকেন দুর্গাপূজার ইতিহাস সম্পর্কে। রাম কল্পারম্ভ করেছিলেন আশ্বিন মাসের
শুক্লা ষষ্ঠীর দিনে।
হিন্দু ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় পূজা হল দুর্গাপূজা। হিন্দু ধর্মের প্রতিটি
অনুসারীকে দুর্গাপূজার ইতিহাস সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আপনি যদি দুর্গাপূজার
ইতিহাস বা দুর্গা পূজা ২০২৩ ইংরেজি কত তারিখ এ সম্পর্কে অথেনটিক তথ্য জানতে চান
তাহলে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।
ভূমিকা
হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় পূজা হল দুর্গা পূজা। প্রতিটি হিন্দু ধর্মের মানুষকে
দুর্গাপূজার ইতিহাস সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানানো
হবে দুর্গাপূজার ইতিহাস সম্পর্কে। এ ছাড়া এই আর্টিকেলে আরো জানতে পারবেন
দুর্গাপূজার ইতিহাস সম্পর্কে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন তথ্য। এছাড়া এই
আর্টিকেলে থাকছে দূর্গা পূজা ২০২৩ ইংরেজি কত তারিখ , দূর্গা পূজা কত তারিখে ,
দূর্গা পূজা বাংলা কত তারিখ, দেবী দুর্গার আবির্ভাব ইত্যাদি সকল বিষয় এ।
দূর্গা পূজা ২০২৩ ইংরেজি কত তারিখ - দুর্গা পূজা 2023 সময় সূচি - দুর্গাপূজার ইতিহাস
আর্টিকেলের এই অংশে দুর্গাপূজার ইতিহাস , দূর্গা পূজা ২০২৩ ইংরেজি কত তারিখ এবং
দুর্গা পূজা 2023 সময় সূচি ইত্যাদি সম্পর্কে জানানো হবে। রাম শরতকালের পার্বতীর
দুর্গতিনাশিনী রূপের বোধন মহা পূজা ও চন্ডী পাঠের আয়োজন করেন এই কাজের জন্য
পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বয়ং ব্রম্মা। অপরদিকে রাম কল্পারম্ভ করেছিলেন আশ্বিন
মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিনে। এছাড়া তিনি এই দিনের সন্ধ্যায় বোধন অধিবাস এবং
আমন্ত্রণ করেছিলেন বলে জানা যায় বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে।
আরো পড়ুনঃ
টাইফয়েড রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিন
কিন্তু সপ্তমী অষ্টমী এবং সন্ধি পূজা করার পরেও যখন দুর্গতিনাশিনীর আবির্ভাব
ঘটেনি তখন রাম 108 টি নীল পদ্ম দিয়ে মহা নবমী পূজার পরিকল্পনা করেছিলেন। ইংরেজি
ক্যালেন্ডার অনুসারে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ২০ তারিখে (২ কার্তিক) শুক্রবার
ষষ্ঠীতে শুরু হবে দুর্গাপূজা। বৃহস্পতিবার রাত্রি ১১ঃ০৩ঃ১৫ (এগারটা তিন মিনিট ১৫
সেকেন্ড) মিনিটে শুরু হবে ষষ্ঠী। পঞ্জিকা অনুযায়ী নিচে দুর্গাপূজা ২০২৩ সময়সূচী
দেওয়া হলঃ
- মহা ষষ্ঠী শুরু হবে বৃহস্পতিবার রাত্রি ১১ঃ০৩ঃ১৫ মিনিটে - শেষ হবে শুক্রবার রাত্রি ৯ঃ৩৬ঃ৫১ মিনিটে।
- মহা সপ্তমী শুরু হবে শুক্রবার রাত্রি ৯ঃ৩৬ঃ৫১ মিনিটে - শেষ হবে শনিবার রাত্রি ৭ঃ৪৯ঃ৫৪ মিনিটে।
- মহা অষ্টমী শুরু হবে শনিবার রাত্রি ৭ঃ৪৯ঃ৫৪ মিনিটে - শেষ হবে রবিবার সন্ধ্যা ৫ঃ৪৭ঃ১২ মিনিটে।
- মহা নবমী শুরু হবে রবিবার সন্ধ্যা ৫ঃ৪৭ঃ১২ মিনিটে - শেষ হবে সোমবার দিন ৩ঃ৩২ঃ৪১ মিনিটে।
- মহা দশমী শুরু হবে সোমবার দিন ৩ঃ৩২ঃ৪১ মিনিটে - শেষ হবে মঙ্গলবার দিন ১ঃ১১ঃ৪২ মিনিটে।
বিভিন্ন হিন্দু গুরুদের মতে অক্টোবর মাসের শেষে পূজা হওয়ায় তত দিনে রাজ্যের উপর
থেকে বর্ষা বিদায় নেবে বলে মনে করা হয়। বর্ষার বিদায়ের কারণে রাজ্যের উপর
হালকা শীতের আভা দেখা দেয়। এ সময় বৃষ্টির সম্ভাবনা যদিও থাকে না তবে
ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা কিছুটা থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অক্টোবরে তৈরি
ঘূর্ণিঝড় তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্র প্রদেশে চলে যায়।
দূর্গা পূজা প্রথম কে করেন - দেবী দুর্গার ইতিহাস
এখন আমরা জানবো দূর্গা পূজা প্রথম কে করেন - দেবী দুর্গার
ইতিহাস সম্পর্কে। কংশ নারায়ণ রায় ছিলেন ইতিহাসখ্যাত তাহেরপুর রাজবংশের
রাজা। ৮৮৭ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসের ষষ্ঠী তিথিতে অকালবোধনের মধ্য দিয়ে রাজা
কংস নারায়ন দেবী দুর্গার প্রতিমা গড়ে প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেন। মহারাজ কংস
নারায়ণের প্রথম দুর্গাপুজোর টি অনুষ্ঠিত হয়েছিল রাজবাড়ীর পাশের প্রধান ফটকের
একটি বেদীতে।
এই পূজায় দেবীর সকল গহনা এবং অলংকার তৈরি করা হয়েছিল স্বর্ণ ও মনি মুক্তা
দিয়ে। তিনি প্রথম তৈরি করেছিলেন এক বিশাল দুর্গা মন্দির। রাজপ্রথা শেষ হওয়ার
আগ পর্যন্ত এই মন্দিরে দুর্গাপূজা হত বলে বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়। তখন
থেকে এখন পর্যন্ত সেই মন্দিরকে দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসে।
দুর্গাপূজাকে বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্য গুলোর মধ্যে একটি ধরা হয়।
প্রতিবছর খুবই জাঁকজমক ভাবে বাংলাদেশের ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপূজা উদযাপিত
হয় আর এই ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকায় অবস্থিত। অনেক গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায় ১৫০০
শতকের প্রথমের দিকে এই দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল। মনে করেন দিনাজপুরের জমিদার
মালদার প্রথম এই পুজো শুরু করেছিলেন। তিনি দেবীর স্বপ্ন আদেশ পেয়ে এ পুজো শুরু
করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
সেই সময়কার দেবের আকৃতি অন্যরকম ছিল। দেবীর বাহন ছিল সাদা বাঘ এবং সবুজ সিংহ
এছাড়া সেই সময় দেবীর চোখ ছিল গোলাকার। দেবী দুর্গা পুরো জগত সংসারে বিরাজ
করেন এছাড়া তার জন্ম হয় না তার আবির্ভাব ঘটে। অপরদিকে দুর্গা সপ্তসিতে বর্ণিত
আছে যে মহাশক্তিশালী ব্রহ্মার ব্রহ্মত্ত, মহাদেবের শিবত্য বিষ্ণুর বিশুদ্ধ
প্রদান করেছেন এরপরেই সেই দেবী দেবতাদের সমষ্টিভূত তেজপুঞ্জ থেকে নিজস্ব রূপ
ধারণ করেন। মা দুর্গার বিশেষ আলোচনা পূজা বিধি তন্ত্র পুরাণেই প্রচলিত।
দেবী দুর্গার দশ হাত কেন - দেবী দুর্গার আবির্ভাব
এখন আলোচনা করা হবে দেবী দুর্গার আবির্ভাব - দেবী দুর্গার দশ হাত কেন এ
বিষয়ে। মহিষাসুর এর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য এবং মহিষাসুর কে বধের উদ্দেশ্যে
দেবতারা শরণাপন্ন হয়েছিল ব্রহ্মা-বিষ্ণু এবং মহেশ্বরের। সেই সময় দেবী দুর্গার
আবির্ভাব হয় ব্রহ্মা-বিষ্ণু এবং মহেশ্বরের মিলিত ত্রিশক্তি থেকে। দেবীর বিভিন্ন
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং দেবীর দশটি হাত আবির্ভূত হয় প্রত্যেক দেবতার বিভিন্ন ধরনের
তেজের কারটে। মহালয়া মানেই দিবি মায়ের পূজার প্রতীক্ষার দিন আর এই দিনেই
দেবীর চক্ষুদান করা হয়ে থাকে।
দুর্গাপূজার সূচনা হবে মহা ষষ্ঠীর মাধ্যমে সারা দেশ বেশ জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন
করে এই পূজা। হিন্দু ধর্মে এই দুর্গাপূজাকে সবচেয়ে বড় পূজা হিসেবে আখ্যায়িত
করা হয়। বৃহস্পতিবার থেকেই পূজোর আমেজ এ ভরে উঠবে পুরো দেশ। এই দুর্গাপূজা
উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেবী
দুর্গাকে সকল অশুভ বিনাশিনী প্রতীক রূপে পূজা করা হয়। এছাড়া দেবী দুর্গা
হলেন মহামায়া এবং অসীম শক্তির উৎস।
আরো পড়ুনঃ
বৃক্ক ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে জেনে নিন
পুরাণ সহ বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথি মতে মহাদেবী দুর্গা মহালয়ার দিনে মহিষাসুর বধের
দায়িত্ব পেয়েছিলেন। শিবের বর অনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনো মহিষাসুরকে
হত্যা করতে পারবে না। যার ফলে অসীম ক্ষমতার অধিকারী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ
থেকে বিতাড়িত করে এবং পুরো বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হতে চায়। যার ফলে
তাকে বধ করা আবশ্যক হয়ে ওঠে।
দূর্গা পূজা কত তারিখে - দূর্গা পূজা বাংলা কত তারিখ
আর্টিকেলের এই পর্যায়ে দূর্গা পূজা কত তারিখে এবং দূর্গা পূজা বাংলা কত তারিখ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। দূর্গা পূজা অক্টোবর মাসের ২০ তারিখে হবে। হিন্দু ধর্মের বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২৩ সালের পুজোতে হালকা শীত ভাব থাকবে। ২০২৩ সালের মহাষষ্ঠী পালন করা হবে ২০ অক্টোবর শুক্রবার। এছাড়া মহা অষ্টমী .২২শে অক্টোবর রবিবার পালন করা হবে মহানবমী পালন করা হবে ২৩ অক্টোবর সোমবার এবং বিজয় দশমী পালন করা হবে ২৪ শে অক্টোবর মঙ্গলবার। আশ্বিন মাসের শুক্লা পক্ষকে দেবিপক্ষ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
দুর্গাপূজা হলো দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশে প্রচলিত একটি হিন্দু ধর্মের মহাউৎসব। এই উৎসব সারা বিশ্বের সকল হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পালন করে আসে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ আসাম উড়িষ্যা বিহার ঝারখান্ড উত্তর প্রদেশ বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ঐতিহ্যগত বিশেষভাবে এই পূজা পালন করা হয়।
দেবী দুর্গার দশ অস্ত্রের নাম - দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপ
দেবী দুর্গার দশ অস্ত্রের নাম গুলো হলঃ
- তলোয়ার
- বর্জ্র
- ত্রিশূল
- সুদর্শন চক্র
- পদ্মফুল
- তীর–ধনুক
- বর্শা
- সাপ
- কুঠার
- গদা
আর্টিকেলের এই অংশে দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। আদ্য
শক্তিরই অন্যরূপ হলেন দেবী দুর্গা এবং নবদুর্গা পার্বতী। দেবী দুর্গা ত্রিশুলের
মাধ্যমে মহিষাসুরকে বধ র করার কারণে তাকে মহিষমর্দিনী নামে অভিহিত করা হয়ে
থাকে। এখানে আদ্য শক্তি বলতে ঈশ্বরের মাতৃরূপের প্রকাশকে বোঝানো হয়েছে। দুর্গা
মাতার আরো অনেক ধরনের রূপ রয়েছে সেগুলো হলঃ
- বামনী
- ব্যাসাণী
- গঙ্গা
- ষোড়শী
- ভুবনেশ্বরী
- কাশিপুরাধিশ্বরিণী
- কামাখ্যা
- বগলামুখী
- তারা
- মহাকালী
- মঙ্গলচন্ডী
- জয়ন্তী
- মঙ্গলা
- ভদ্রকালী ইত্যাদি।
পার্বতীর দ্বিতীয়রূপ হল ব্রহ্মচারীণী। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে এখানে ব্রহ্ম
শব্দ দ্বারা তপস্যা কে বোঝানো হয়েছে আর ব্রহ্মচারী নিয়ে অর্থ তপস্যারিণী।
শেষ কথাঃ দুর্গাপূজার ইতিহাস - দূর্গা পূজা ২০২৩ ইংরেজি কত তারিখ
প্রিয় পাঠক আপনি শেষ কথা পড়ছেন তার অর্থ হল উপরে দুর্গাপূজার ইতিহাস
সম্পর্কে লিখা আর্টিকেলটি আপনি পড়েছেন। আশা করি দুর্গাপূজার ইতিহাস সম্পর্কে
আপনি যথাযথ ধারণা পেয়েছেন। দুর্গাপূজার ইতিহাস এবং দূর্গা পূজা ২০২৩ ইংরেজি
কত তারিখ এ সম্পর্কে আপনার সকল প্রশ্ন এর উত্তর পেয়েছেন।
ওপরে লিখিত দুর্গাপূজার ইতিহাস সম্পর্কে আপনার যদি কোন বক্তব্য বা প্রশ্ন
থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো আর্টিকেল
সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
Rajrafi.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url