টাইফয়েড রোগের লক্ষণ - টাইফয়েড থেকে বাঁচার উপায়

প্রতিটি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের ক্ষেত্রে টাইফয়েড রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আজ আমরা আলোচনা করতে চলেছি টাইফয়েড রোগের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে। আমাদের পাঠকদের মধ্য থেকে অনেকেই প্রশ্ন করেন টাইফয়েড রোগের লক্ষণ সম্পর্কে। টাইফয়েড এর জীবাণু রক্তে ছড়ানোর পর তীব্রভাবে জ্বর চলে আসে শরীরে।
টাইফয়েড রোগের লক্ষণ - টাইফয়েড এর পরবর্তী সমস্যা

বিভিন্ন কারণে শরীরের টাইফয়েড এর জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। আপনি যদি অনলাইনে টাইফয়েড নিয়ে সঠিক কিছু তথ্য জানতে চান সে ক্ষেত্রে আপনি শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক টাইফয়েড রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে।  

ভূমিকা

টাইফয়েড রোগের লক্ষণ সম্পর্কে যদি আপনি জানতে আগ্রহী হন সে ক্ষেত্রে এই পোস্টটি আপনার জন্য। টাইফয়েড রোগের বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ এর ওপর থেকে বাঁচার উপায় সহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে। অপরদিকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে সম্পূর্ণরূপে সমাধান পাওয়া সম্ভব। বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকুন।

টাইফয়েড জ্বর কি ছোঁয়াচে - টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত না

মনে রাখতে হবে টাইফয়েড একটি ছোঁয়াচে রোগ। টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে এমনকি পানির মাধ্যমেও এই টাইফয়েড রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। তারপরে আক্রান্ত হওয়ার পরে যদি প্রচন্ড জ্বর আসে সে ক্ষেত্রে ৪-৫টি শুকনো আঙ্গুর বা কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া যেতে পারে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে টাইফয়েড এ  আক্রান্ত রোগ রোগীদের শারীরিক দুর্বলতা কাটানোর জন্য দুধ ডিম অল্প পরিমাণে বারবার খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত যেকোনো জ্বর হলে পুষ্টিকর কিছু খাদ্য খাওয়ানো উচিত রোগীকে, টাইফয়েড জ্বর ও এর ব্যতিক্রম নয়। অবশ্যই টাইপের জ্বর হলে পুষ্টিকর কিছু খাবার খাওয়াতে হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
  • আপেল
  • আঙ্গুর
  • বেদানা
  • কমলালেবু
  • পেয়ারা
  • বিভিন্ন ধরনের শাক
  • মাছ
  • বিভিন্ন ধরনের ডাল
  • মাংস
  • ডিম
  • গরম দুধ ইত্যাদি

টাইফয়েড রোগের লক্ষণ - টাইফয়েড এর পরবর্তী সমস্যা

টাইফয়েড এর জীবাণু গুলোর নাম হলঃ  সালমনেলা টাইফি ও প্যারাটাইফি। শরীরে রক্তের সঙ্গে টাইফয়েড এর জীবাণু মিশ্রিত হলে যে সকল সমস্যা হয় সেগুলো হলঃ
  • প্রচুর পরিমাণে মাথা ব্যথা
  • গলা ব্যথা
  • শরীরের দুর্বলতা
  • পেটব্যথা
  • প্রচন্ড পরিমাণে জ্বর ( ১০৩ থেকে ৪° পর্যন্ত জ্বর আসতে পারে )
  • ডায়রিয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্যসহ না ধরনের সমস্যা শরীরে দেখা দেয়। 
এই সমস্যাগুলোকে টাইফয়েডের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এছাড়া টাইফয়েডের জটিল কিছু উপসর্গ হলোঃ
  • পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণ
  •  মেরুদন্ডের সমস্যা সৃষ্টি
  • মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি
  • শরীরে ফোড়া
  • পিত্তথলির বিভিন্ন সমস্যা
  • নিউমোনিয়া
  • স্নায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা
  • কিডনির বিভিন্ন জটিলতা ইত্যাদি। 
আমাদের দেশে গ্রীষ্ম এবং বর্ষা ঋতু আসার পরে সবচেয়ে বেশি টাইফয়েড এবং ডেঙ্গু রোগের পাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়।

এই দুই ঋতুতে জ্বরে আক্রান্ত হলে অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি বিষয় হলো যে কোন রোগের ক্ষেত্রে দ্রুত এন্টিবায়োটিক এ শিফট করা যার ফলে যেকোনো রোগের জীবাণু এন্টিবায়োটিক রোধী হয়ে পড়ছে এজন্য যে কোন রোগ শনাক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজে নিজে কোন ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।

টাইফয়েড থেকে বাঁচার উপায় - টাইফয়েড হলে কি খাওয়া উচিত

গোসল বা পান করার জন্য ফুটানো পানি প্রয়োজন। টাইপার থেকে বাঁচতে হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সংরক্ষিত পানি পান করতে হবে। ২৪ ঘন্টার পরে সংরক্ষিত পানি দূষিত হয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফুটপাতে বা রাস্তার পাশে বিকৃত বিভিন্ন ধরনের খাদ্য এবং পানি পান করা থেকে বিরত রাখতে হবে নিজেকে খেতে হবে রান্নার বাসনপত্র পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। 

উপরে উল্লেখিত উপায় গুলো সঠিকভাবে মানার ফলে টাইফয়েড থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। এছাড়া টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করে তোলার জন্য কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাদ্য বেশি খাওয়াত হবে। কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে কোন অতিরিক্ত চাপ পড়ে না খাদ্য পরিপাক করতে। এছাড়া এই সকল খাদ্যে অধিক পরিমাণে পুষ্টি বিদ্যমান থাকে। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। শরীরে পুষ্টি প্রদানের জন্য পানির পাশাপাশি ফলের রস জুস হারবাল চা সুপ ভাতের মাড় খাওয়া যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন টাইফয়েড হলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি । এই জন্য পারাতপক্ষে তরল খাদ্য গ্রহণ করতে হবে । তরল খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীর থেকে টক্সিন দ্রুত বের হয়ে যাবে এবং তাড়াতাড়ি শরীর সুস্থ হবে।

টাইফয়েড জ্বর কত দিন থাকে - টাইফয়েড জ্বর ভালো করার উপায়

টাইফয়েড রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা এন্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করে থাকেন। চিকিৎসকদের মতে টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা না পেলে এ রোগ আরো গুরুতর হতে পারে এবং জ্বর প্রায় এক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী শরীরে থাকতে পারে।

সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক শুরু হওয়ার পরেও সর্বনিম্ন পাঁচ দিন লেগে যেতে পারে জ্বর কমার জন্য। সাধারণত টাইফয়েডে বা জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। পানির চাহিদা পূরণ করতে এবং শরীরে পুষ্টি উপাদান প্রবেশ করানোর জন্য প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিকর তরল খাদ্য খেতে হয় এ সময়। তারপরে আক্রান্ত অবস্থায় বিভিন্ন প্রকার জুস ফলের রস সুপ ভাতের মাড় ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
টাইফয়েড আক্রান্ত হওয়ার পরে যদি জ্বর অতিরিক্ত হয়ে থাকে তাহলে শরীর মুছে দেওয়া সবচেয়ে ভালো। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে টাইফয়েড কিন্তু একটি পানিবাহিত রোগ।

টাইফয়েড এর ক্ষতিকর দিক - টাইফয়েড হলে কি চুল পড়ে যায়

টাইফয়েড এর ক্ষতিকর দিক এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণ , মেরুদন্ডে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি , মস্তিষ্কে প্রবাহ সৃষ্টি , পিত্তথলির সমস্যা সৃষ্টি , স্নায়ু এবং কিডনিতে বিভিন্ন সমস্যা হওয়া ইত্যাদি। টাইফয়েড নির্দিষ্ট কোন বয়স অনুযায়ী হয় না যে কোন বয়সে টাইফয়েড এ আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে সতর্কতা অবলম্বন না করলে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি টাইফয়েড এ ।

টাইফয়েড এর কারণে থাইরয়েডের সমস্যা জাগতে পারে এছাড়া দীর্ঘদিন টাইফয়েডে আক্রান্ত থাকলে চুল পড়ার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। টাইফয়েড নিরাময় ব্যবহৃত কিছু ঔষধ রয়েছে যা চুল পড়ার জন্য দায়ী। এছাড়া টাইফয়েড এর কারণে মাথায় ছত্রাক ও খুশকির সংক্রমণ হয় যার ফলে অপুষ্টি রক্তশূন্যতা এবং ভিটামিনের অভাব দেখা যায় চুলে এর কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চুল পড়তে শুরু করে।
আর আজকেরেঅতিরিক্ত মানসিক স্ট্রেস উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখলে এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে চুল পড়ার সমস্যা ভালো হয়। তবে টাইফয়েড হওয়ার পরেও চুলকে ঘন ও মজবুত রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চুলকে পুষ্টি দিতে হবে খাদ্য এর মাধ্যমে।

শেষ কথাঃ টাইফয়েড রোগের লক্ষণ - টাইফয়েড এর পরবর্তী সমস্যা

প্রিয় পাঠক আশা করি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যথাযথ ধারণা পেয়েছেন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা টাইফয়েড এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি সঠিক তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি টাইফয়েড থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে ধারণা পাবন। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। এমনই নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Rajrafi.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url