টাইগার মুরগি চেনার উপায় - টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি
প্রিয় পাঠক আপনি কি টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি এবং টাইগার মুরগির খাবার তালিকা
সম্পর্কে জানতে চান? আজ আমরা টাইগার মুরগী পালন এবং টাইগার মুরগির খাবার সহ
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। টাইগার মুরগি নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলের
মাধ্যমে বিস্তার আলোচনা করা হবে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকুন।
অনেকেই আছেন যারা উন্নত জাতের টাইগার মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার চিন্তা
করছেন তাদের অবশ্যই এই আর্টিকেলটি প্রয়োজন পড়বে। কারণ এখানে বিস্তারিতভাবে
টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে উল্লেখ করা আছে।
ভূমিকা
বর্তমান সময়ে কিছু কিছু সময় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অল্প পরিশ্রমের অধিক
লাভবান হওয়া সম্ভব। তেমনই একটি লাভজনক ব্যবসা হল টাইগার মুরগী পালন বা
টাইগার মুরগির খামার তৈরি বর্তমান সময়ে পুষ্টিগুণের দিক থেকে অতি চাহিদা সম্পন্ন
একটি মুরগি হল টাইগার মুরগির। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে টাইগার চেনার উপায়
টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি সহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানাবো। টাইগার মুরগি পালন
সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকুন।
টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি
টাইগার মুরগি পালন করতে হলে সর্বপ্রথম একটি পরিষ্কার জায়গা প্রয়োজন হবে
যেখানে কোন ভাইরাস বা রোগের সংক্রমণ থাকবে না। এইজন্য ভিজা জায়গা থেকে দূরে
শুকনো জায়গায় এই মুরগির খামার তৈরি করতে হবে। সাধারণত টাইগার মুরগির অন্যান্য
মুরগীর চেয়ে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এই জন্য অধিক প্রোটিনের প্রয়োজন হয়
এ মুরগির শরীরে।
সাধারণ সোনালী বা দেশি মুরগিকে যেমন খাদ্যে দেওয়া হয় তার থেকে বেশি
প্রোটিনযুক্ত খাদ্য এই মুরগিকে দিতে হবে। অনেক খামারি আছেন যারা টাইগার মুরগির
খামার তৈরি করার পরে বয়লার মুরগির খাদ্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু বয়লার মুরগির
চেয়ে একটু বেশি প্রোটিন ও খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে এই মুরগির। এইজন্য বয়লার
মুরগির খাদ্য টাইগার মুরগীকে খাওয়ালে অধিক খরচ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে
বেশি থাকে।
বর্তমান সময়ে টাইগার মুরগির জন্য বিভিন্ন কোম্পানি খাদ্য তৈরি করছে। রেডিমেট
যেকোনো জনপ্রিয় কোম্পানির খাদ্য খাওয়ানো যেতে পারে তবে টাইগার মুরগির খাদ্য
যদি নিজের তৈরি করে খাওয়ানো যায় সে ক্ষেত্রে অধিক মুনাফা অর্জন করা সহজ হবে।
টাইগার মুরগির খাদ্য তৈরি করার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে তার মধ্যে একটি হল
সর্বনিম্ন প্রোটিনের মাত্রা ২০% এর নিচে থাকা যাবে না অপরদিকে সর্বনিম্ন
ফ্যাটের পরিমাণ থাকতে হবে ৬%।
খাবারে এই সকল উপাদান যত বেশি হবে তত দ্রুত বৃদ্ধি হবে এই মুরগি। টাইগার মুরগি
দেশি বা সোনালি মুরগির মতো খামারে আবদ্ধ করে অথবা ছেড়ে দিয়ে পালন করা যেতে
পারে। যদি খামারে পালন করতে চান সে ক্ষেত্রে বয়লার মুরগি বা সোনালি মুরগি পালন
পদ্ধতি অনুসারে পালন করা যেতে পারে। সুষম প্রোটিন যুক্ত খাদ্য সঠিকভাবে
খাওয়াতে পারলে শুধুমাত্র দুই মাসের দেড় কেজি ওজন করা সম্ভব এ মুরগির।
টাইগার মোরগের সর্বোচ্চ ওজন ৭ থেকে ৮ কেজি হয়ে থাকে এছাড়া মুরগির ওজন তিন
থেকে সাড়ে চার বা পাঁচ কেজি ও হয়ে থাকে। একটি টাইগার মুরগি প্রতিদিন ১৫০
গ্রাম থেকে শুরু করে 200 গ্রাম পর্যন্ত খাদ্য খেয়ে থাকে। টাইগার মুরগির
বাচ্চার দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা পিচ হয়ে থাকে। এছাড়া এরা ছয় মাস বয়সে পরিপূর্ণ
ডিম দিতে শুরু করে থাকে অপরদিকে বছরে ২০০ টির মত ডিম দিয়ে থাকে টাইগার মুরগি।
টাইগার মুরগির খাবার তালিকা
এখন আর্টিকেলের এই পর্যায়ে টাইগার মুরগি জন্মানোর প্রথম দিন থেকে শুরু করে কি কি
খাবার খাওয়াতে হবে এ সম্পর্কে একটি তালিকা তৈরি করব। আর্টিকেলের প্রথমেই বলেছি
টাইগার মুরগি অধিক দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অধিক প্রোটিন প্রয়োজন হয় এদের শরীরে
এই জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করে এদের খাদ্য প্রদান করতে হয়।
যেন টাইগার মুরগির দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ওজন হয় প্রতিদিন প্রোটিনযুক্ত খাদ্য
পরিমিতভাবে প্রদান না করলে বেশিদিন সময় লাগবে এই মুরগি পালন করে বড় করতে। চলুন
টাইগার মুরগির খাদ্য তালিকা জানার আগে কয়েকটি বিষয় জেনে আসিঃ
- সর্বপ্রথম মোট খাদ্যের পরিমাণের হিসাব জানতে হবে
- প্রতিদিন কেমন খাদ্য দিতে হবে এটির একটি নির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে
- ছোট থেকে বড় করতে হলে প্রতিদিন প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে অল্প অল্প করে
- প্রতিদিনের গড় বৃদ্ধির হিসাব রাখতে হবে
- বয়স অনুযায়ী কেমন ওজন হবে এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে
অনেকেই আছে যারা অসৎ উপায়ে ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে মুরগিকে বড় করে এবং ওজন বৃদ্ধি
করে। এ সকল মুরগি দৈহিক বৃদ্ধি হয় ঠিকই কিন্তু এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই
বললেই চলে। এ সকল মুরগি মানুষ খেলে ক্যান্সার এর মত মরণ ব্যাধির শিকার
হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে জেনে নিন
টাইগার মুরগি সঠিক নিয়মে পালন করার জন্য দৈহিক বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধির জন্য সুষ্ঠু নিয়মে খাদ্য প্রদান করতে হবে। খামারিদের টাইগার মুরগি পালন
করার আগে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই জেনে রাখতে হবে সেগুলো হলোঃ
- কোন পর্যায়ের পুষ্টিমানের খাবার টাইগার মুরগীকে দিতে হবে
- কোন বয়সের মুরগিকে কেমন খাবার দিতে হবে
- এই মুরগি পালন করার উদ্দেশ্য কি
- আবহাওয়া এর উপর ভিত্তি করে খাবার প্রয়োগ করতে হবে
এক মাস বা এর কম বয়সের মুরগিকে খাদ্য হিসাবে স্টার্টার দেওয়া যেতে পারে।
অপরদিকে টাইগার মুরগি যখন বাড়ন্ত বয়স শুরু হবে সেই সময় এবং ডিম পাড়ার সময়
হলে টাইগার মুরগীকে লেয়ার ফিড খাওয়াতে হবে। তাহলে মুরগি থাকবে স্বাস্থ্যবান এবং
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমবে না কখনো মুরগির। বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে মুরগির
জন্ম নেওয়ার প্রথম দিন থেকে 6 সপ্তাহ পর্যন্ত স্টার্টার খাওয়ানো যেতে পারে।
এরপরে সপ্তম সপ্তাহ থেকে ১৪ তম সপ্তাহ পর্যন্ত গ্রোয়ার খাওয়াতে হবে টাইগার
মুরগীকে। লেয়ার ফিল্ড 15 থেকে 45 সপ্তাহ পর্যন্ত খাওয়ানো যাবে ডিম পাড়ানোর
ক্ষেত্রে এখানে বলে রাখা ভালো ১৫ থেকে ৪৫ সপ্তাহ পর্যন্ত লেয়ার ফিড ১ খাওয়াতে
হবে এবং ৪৬ থেকে ৯৫ সপ্তাহ পর্যন্ত অবশ্যই লেয়ার ফিড ২ খাওয়াতে হবে।
টাইগার মুরগি চেনার উপায়
টাইগার মুরগি সাধারণত উন্নত মানের মুরগির মধ্যে পড়ে। টাইগার মুরগি সাধারণ
মুরগির চেয়ে বেশি ডিম দেয়। টাইগার মুরগি চেনার উপায় হলঃ এ মুরগির মাথা
হবে ছোট এছাড়া মাংস থাকবে কম শরীরে প্রথম অবস্থাতে। ভালো মানের মুরগি চেনার
একমাত্র উপায় হল সব সময় চোখ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। মুরগির নাক এবং মুখ সূচালো
হয়ে থাকে শরীর চকচকে দেখতে হয়ে থাকে।
ভালো জাতের মুরগির চোখের বর্ণ উজ্জ্বল হয়ে থাকে এছাড়া মুরগির মাথায় ঝুঁটি
এবং গলায় ফুল হয়ে থাকে শরীর লাল রঙের চকচকে হয়ে থাকে। টাইগার মুরগির ডিম
পেটে আসলে ওজন বৃদ্ধি পাবে। ভালো জাতের মুরগির কখনো খুঁত থাকবে না। ভালো যাতে
মুরগি পেতে হলে এবং ভালোভাবে পালন করতে হলে অবশ্যই ভালো মানের খাদ্য দিতে হবে।
এ মুরগির খাদ্যথলি সব সময় ভরা থাকে পানি এবং প্রয়োজনীয় খাবারের মাধ্যমে।
ভালো মানের খাদ্য বা ফিড না দিলে মুরগির স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায় যার ফলে
বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয় খামারীর।
টাইগার মুরগি কত দিনে ডিম পাড়ে
জাতের উপর ভিত্তি করে দেশি মুরগি ১৫০ থেকে ১৭০ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে।
সাধারণত দেশি মুরগি 15 থেকে 18 টি ডিম একসাথে দিতে পারেন। বয়স বাড়ার সাথে
সাথে ডিমের আকার ছোট হতে থাকে একপর্যায়ে গিয়ে ডিম দেওয়া বন্ধ করে দেয়
মুরগি।
মুরগি ডিম পাড়া শেষ হলে ডিমে তা দেওয়ার জন্য ডিমের উপর বসে পড়ে এই
প্রক্রিয়া ডিম থেকে বাচ্চা না বের হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে। কমবেশি সকল জাতের
মুরগি ডিমে তা দেয়। তবে এখন আলোচনা করব মুরগিকে তা দেওয়া থেকে বিরত রাখার
প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে।
- প্রোটিন যুক্ত খাদ্য নিয়মিত প্রদান করতে হবে
- মুরগি ডিম পাড়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা সংগ্রহ করে নিতে হবে
- নিয়মিত মুরগিকে ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত খাদ্য দিতে হবে যেন তার শরীরের প্রোটিনের অভাব না হয়
- মুরগির থাকার স্থানে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে হবে
- ডিমের তা দেওয়া মুরগিকে অন্যান্য মুরগী থেকে আলাদা করে রাখতে হবে
টাইগার মুরগি সাধারণত জন্মের পর ১৫সপ্তাহ থেকে ডিম পাড়া শুরু করে। অনেক
ক্ষেত্রে এই সকল মুরগির ওজন ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। বর্তমান সময়ের
বাজার দর অনুযায়ী ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় কারণ এ মুরগির মাংস
সাধারণ মুরগির চেয়ে অধিক সুস্বাদু এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ হয়ে থাকে।
টাইগার মুরগির ঔষধের তালিকা
এখন আমরা আলোচনা করতে চলেছি টাইগার মুরগি পালনের সুবিধা সম্পর্কে।
- কম খাদ্য দেওয়ার পরেও অন্যান্য মুরগির চেয়ে গ্রোথ বেশি
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি
- দেখতে আকর্ষণীয় হয়
- প্রোটিনে ভরপুর এই মুরগির মাংস
- খুব ভালো দাম পাওয়া যায়
- ডিম থেকে বাচ্চা উৎপন্ন করে বিক্রিতে অত্যাধিক লাভ আছে
- খোলা স্থানে পালন করা যায় যার ফলে খাবারের খরচ কিছুটা কমে
-
খোলা স্থানে পালন করলে পোকামাকড় খেয়ে নিজের খাদ্য চাহিদা কিছুটা কমায়
প্রতিটি বিষয়ের সুবিধা থাকলে অসুবিধা ও থাকে এখন জানবো টাইগার মুরগি পালনের
অসুবিধা গুলোঃ
- সাধারণ মুরগির বাচ্চার চেয়ে টাইগার মুরগির বাচ্চার দাম বেশি
- ভালো মানের বাচ্চা সচরাচর পাওয়া যায় না
- টাইগার মুরগির বাচ্চার মধ্যে সোনালি মুরগির বাচ্চা মিশ্রিত থাকে
- সোনালি মুরগির বাচ্চা এবং টাইগার মুরগির বাচ্চা দুইটা একই রকম দেখতে ছোট অবস্থায়
এ মুরগি খোলা স্থানে বা আবদ্ধ জায়গায় দুইভাবেই পালন করা যায়। খামারে পালন
করার ক্ষেত্রে বয়লার বা সোনালী মুরগীর পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।
শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠক টাইগার মুরগি সম্পর্কে সকল ধরনের তথ্য এবং ধারণা দেওয়ার চেষ্টা
করেছি আজকে আর্টিকেলে। টাইগার মুরগি সম্পর্কে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে
আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আশা করি উপরে আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত
হবেন। নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের google নিউজ ফলো করে রাখুন এবং
বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।
Rajrafi.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url