সালাতে ফরজ ছুটে গেলে তার বিধান কি - তিন রাকাত নামাজ ছুটে গেলে করণীয়



বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে সঠিক নিয়মে সালাত আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে আমাদের জানিয়ে গেছেন। তিনি আরো শিখিয়ে গেছেন সালাতের ফরচ ছুটে গেলে কি কি করণীয় এ সকল বিষয়।

সালাতে ফরজ  ছুটে গেলে তার বিধান কি - তিন রাকাত নামাজ ছুটে গেলে করণীয় 

নামাজের ফরজ গুলো সম্পর্কে যদি বিস্তারিত জানা না থাকে তাহলে নামাজ আদায় করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ নামাজ আদায় করতে গেলে অবশ্যই ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যারা নামাজের ফরজ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। চলুন আজকে আমরা আর্টিকেল থেকে নামাজের ফরজ গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

অবশ্যই আমরা মুসলিম।আর মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রধান কর্তব্য হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ দৈনিক আদায় করা। যখন আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে তখন অবশ্যই নামাজের ফরজ মেনে চলতে হবে। নামাজের যেমন সুন্নাত রয়েছে,  নামাজের যেমন ওয়াজিব রয়েছে, তেমন নামাজের রয়েছে ফরজ।

চলুন নামাজের ফরজ গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। নামাজের ফরজ সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয় নামাজের মোট ১৩ টি ফরজ রয়েছে। এর মধ্যে নামাজের বাইরে রয়েছে ৭টি ফরজ এবং ভেতরে রয়েছে ৬টি ফরজ। এই যে ১৩ টি ফরজ রয়েছে নামাজের মধ্যে এর ভিতর থেকে যদি একটি বাদ যায় তাহলে নামাজ হবে না। নতুন করে আবার নামাজ শুরু করতে হবে।

যদি আমরা ফরজ ছেড়ে দিয়ে নামাজ সম্পূর্ণ শেষ করি আবার নতুন করে শুরু না করে নতুন ভাবে নামাজ আদায় না করি তাহলে অবশ্যই আমাদের গুনাহ হবে এবং আমরা নেকি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হব। তাই অবশ্যই নামাজ শুরু করার আগে এবং নামাজ শুরু করার পরে এবং নামাজের ভিতরে এই ১৩ টি ফরজ অবশ্যই মেনে চলতে  হবে। চলুন ফরজ গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

নামাজের বাহিরের ৭টি ফরজ 

  • ওযূ করা
  • শরীর পাক বা শরীর পবিত্র করা 
  •  নামাজ পড়ার কাপড় পাক-পবিত্র হওয়া 
  • যে স্থানে নামাজ পড়া হবে সেই স্থানটি পাক-পবিত্র হওয়া 
  • সতর ঢাকা অথাৎ মেয়েদের ও ছেলেদের  শরীর ঢেকে নামাজ পড়া 
  • কিবলামুখী হয়ে নামাজ পড়া 
  • সহীহ শুদ্ধভাবে নামাজের নিয়ত করা 

নামাজের ভিতরে ফরজ 

  • তকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলা 
  • ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে থেকে পড়া 
  • কি রাত করা অর্থাৎ কোরআন শরীফ থেকে নূন্যতম তিন আয়াত ও বড় এক আয়াত  পরিমাণ সূরা পড়া 
  • রুকু করা
  • সিজদাহ  করা 
  • শেষ বৈঠক অর্থাৎ সালাম ফিরানো ও মোনাজাতের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা। 
উপরে বর্ণিত নামাজের ভিতর ও বাহিরের ফরজ গুলোর মধ্যেও যদি নামাজের ভিতরে কোন খরচ ছুটে যায় তাহলে অবশ্যই আপনাকে নতুন করে নামাজ আদায় করতে হবে। অর্থাৎ যদি ভুল করেও আপনার নামাজের মধ্যে কোন ফরজ আদায় করতে ভুলে যান তাহলে অবশ্যই নতুন করে নামাজ শুরু করুন না হলে আপনার নামাজ হবে না।

নামাজের ভিতর ও বাহির মিলে যে ১৩ টি ফরজ রয়েছে সে ১৩ টি ফরজের একটি ফরজ নামাজের মধ্যে ভুলে গেলে আবার নতুন করে নামাজ শুরু করতে হবে। না হলে সেই নামাজ আমাদের সবার জন্য কাজা নামাজ হয়ে যাবে। যদি আপনি নতুন করে নামাজ শুরু না করে ভুল নামাজই পড়ে যান এবং কাজা নামাজ আদায় না করেন তাহলে অবশ্যই সেই গুনাহের ভার আপনাকে নিতে হবে। 

নামাজের ভিতরে যদি কোন ফরজ একাধিকবার আদায় করা হয়ে যায় তবে সেখানে অবশ্যই সাহু সিজদা দিতে হবে।একটি  কথা অবশ্যই জেনে রাখা দরকার যে নামাজের ভিতরে যদি কোন সুন্নাহ বাদ পড়ে যায় তাহলে সাহু সিজদার কোন প্রয়োজন নেই। নামাজের ওয়াজিবের ক্ষেত্রেও ঠিক একই নিয়ম প্রযোজ্য। তবে এটাও যেন জেনে রাখা দরকার যে নামাজের মধ্যে কোন ওয়াজিব বেশি বার করলে বা একাধিকবার করলে অবশ্যই সাহু সিজদা দিতে হবে। 

যদি নামাজের মধ্যে ফরজ ছুটে যায় তাহলে আপনাকে সেই নামাজ আবার পড়তে হবে। সাহস সিজদা দেয়ার জন্য আপনাকে নামাজে শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ শরীফ, দোয়া মাসুরা পড়ার পর তাকবির তাহরিমা দিয়ে পরপর দুইবার সিজদা করতে হবে। তারপর সালাম ফিরিয়ে আপনার নামাজ শেষ করতে হবে। নামাজে সালাম ফিরানোর আগে সাহু সিজদা  করতে হবে। 

যদি আপনার নামাজের ভিতরে তিন রাকাত নামাজ ছুটে যায় সে ক্ষেত্রে আপনি তারপর তিন রাকাত নামাজ আদায় করে নিবেন। যদি আপনি জামাইদের সঙ্গে নামাজ পড়েন এবং নামাজ পড়তে গিয়ে আপনার তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাজের ভিতরে আপনার যদি দুই রাকাত নামাজ ছুটে যায় তাহলে আপনি সে ক্ষেত্রে ইমামের পিছনে বসে ইমাম যখন সালাম ফিরাবেন তখন আপনি তার সাথে উভয় দেখাতেই সূরা কেরাত করে মিলিয়ে পড়বেন এবং প্রথম রাকাতে বসে তাশাহুদ পাঠ করে উঠে যাবেন। 

কেননা যখন আপনার দুই রাকাত ছুটে যাবে তখন এই রাখার টি আপনার দ্বিতীয় রাকাত হিসেবে নামাজে ধরা হবে। অথবা আপনি ইমাম সাহেবের সঙ্গে সম্পূর্ণ নামাজ শেষ করে পরে আপনার ছুটে যাওয়া তিন রাকাত নামাজ আদায় করতে পারবেন। 

মাসবুক সালাত কি - মাসবুক ব্যক্তির বাকি নামাজ আদায় করার পদ্ধতি 

মাসবুক সালাত:মাসবুক শব্দটি আরবি শব্দ।  মাসবুক শব্দের অর্থ হলো কেউ বা কিছুর জন্য  এগিয়ে আসা। মাসবুক বলতে ইসলামিক পরিভাষায় যা বুঝায় তা হল নামাজে অংশগ্রহণকারী এমন একজন মুসলমান ব্যক্তি যার ইমাম তার থেকে আগেই কয়েক রাকাত নামাজ বা পুরো নামাজ পড়ে ফেলেছেন অথবা তিনি এমন একজন মানুষ যিনি একবার একাধিক রাকাত শেষ হওয়ার পরে ইমামের সঙ্গে নামাজের শরিক হয়েছেন।

অর্থাৎ যখন জামাতে নামাজ শুরু হয়েছে সেক্ষেত্রে যে মুসলমান ব্যাক্তি ইমাম যখন নামাজ শুরু করেছেন ঠিক তখন উপস্থিত না হয়ে তার কিছুক্ষণ পরে উপস্থিত হয়েছেন এবং নামাজ পড়ছেন এরকম নামাজকে মাসবুক নামাজ বলা হয়। নবী মুহাম্মদ সাল্লাম একবার মাসবুক নামাজের শরিক হয়েছিলেন। নিচে বর্ণনাটি তুলে ধরা হলোঃ মুগীরা ইবনে সুবা হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তিনি বলেন একদিন ফজরের সালাতের আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজতের উদ্দেশ্যে বের হলেন। আর আমি তার পেছন পেছন একটি পানির পাত্র গ্রহণ করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বেরিয়ে আসার পর আমি তার দুই হাতের কব্জির উপর পানি ঢালতে লাগলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দুই হাত ও চেহারা ধুয়ে ফেললেন। তখন তার গায়ে একটি পশমের জুব্বা পড়া ছিল।

তিনি তার জুব্বার আস্তিন গুটিয়ে নিলেন এবং হাত দুটি খুলতে  চাইলেন। কিন্তু তার জামার হাত দুটি ছিল খুবই চিকন । তাই তিনি তার জামার ভেতরের দিক দিয়েই তার হাত দুটি বের করলেন এবং নিজের দুই কাঁধের উপর রেখে দিলেন এবং হাত দুটি কোনুই  পর্যন্ত ধুয়ে ফেললেন। অতঃপর তিনি মাথা ও মাপাগির উপর মাসা করলেন তারপর আমি তার মুজাগুলো খুলে দিতে চাইলাম। তিনি বললেন এগুলো এভাবে থাকতে দাও এবং আমি এগুলো পবিত্র অবস্থায় পড়েছি। তিনি এগুলোর উপর দিয়েই মাশাহ করলেন।

অতঃপর তিনি সবারির উপর চললেন এবং আমিও চললাম এবং আমরা একটি দলের কাছে পৌঁছে গেলাম। তখন তারা সবাই নামাজে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন এবং তাদের ইমামতি করছিলেন আব্দুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু তালা। তিনি নামাজের এক রাকাত আদায় করে ফেলেছিলেন ততক্ষণে। ইমাম সাহেব রাসুল সাঃ এর আগমন বুঝতে পেরে পেছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম তাকে নিষেধ করলেন এবং তার সঙ্গে এক ছুটে যাওয়া নামাজের এক রাকাত আদায় করলেন ।

যখন ইমাম সাহেব সালাম ফিরালেন তখন রাসুলুল্লাহ সাঃ দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমিও তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং আমাদের ছুটি দেওয়ার নাম আমাদের দুই রাকাত আমরা আদায় করলাম আর এটি হল মাসবুক সালাতের উদাহরণ। 

মাসবুক সালাতে করণীয় 

মাসবুক ব্যক্তি যেন তার ইমামের সঙ্গে শেষ বৈঠকে সালাম না ফেরেই বরং যখন ইমাম শেষ বৈঠকে প্রথম সালাম শেষ করবে তখন মাঝবুক তার সাথে সালাত পূর্ণ করার জন্য দাঁড়িয়ে যাবে একজন মাসবুক ব্যক্তি তার নিজের নামাজ শেষ করবেন এবং নামাজটি তিনি এভাবে শেষ করবেন যেন সে আলাদাভাবে নামাজ আদায় করেছেন।

মাসবুক ব্যক্তি তার নিজের রাকাত গণনা অনুসরণ করবে সুরা তিলাওয়াতের মাধ্যমে অর্থাৎ সে ইমামের সাথে দুই রাকাত নামাজ যদি না পেয়ে থাকে এবং বাকি রাকাত গুলো শেষ করার জন্য উঠে দাঁড়ায় তাহলে তাকে সম্পূর্ণ সূরা পড়তে হবে উভয় রাকাতে। যদি মাসবুক ব্যক্তি প্রথম তিন রাকাত নামাজ না পেয়ে থাকে তাহলে ইমামের সঙ্গে শুধুমাত্র এক রাকাত নামাজ আদায় করতে পারবে। এবং ছুটে যাওয়া দ্বিতীয় রাকাত নামাজ সে নিজের মতো করে আদায় করে নিবে।

মাসবুক ব্যক্তির নামাজ পড়ার পদ্ধতি আছে। ইমাম সাহেবের উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পর ইমাম সাহেবের পিছনে দাঁড়িয়ে বাকি নামাজটা পালন করবে। এক্ষেত্রে সে জামাতের সঙ্গে নামাজে না থেকে সে একাকী নামাজ আদায়কারীর পক্ষে চলে যাবে। অর্থাৎ যদি কোন কারনে তার সাহসের তা হয়ে থাকে আবশ্যক সেক্ষেত্রে তাকে সাহু সিজদা দিতেই হবে। এক্ষেত্রে যদি তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায় তাহলেও ঠিক আছে।

আর যখন সে নামাজের মধ্যে কীরাত করবে সে ক্ষেত্রে তাকে খেয়াল রাখতে হবে প্রথম দিকে রাকাতের বড় সূরা তিন আয়াত পর্যন্ত নামাজের ভিতরে তিলাওয়াত করতে হবে। অর্থাৎ মাসবুক ব্যক্তি যদি প্রথম এক রাকাত নামাজ না পড়তে পারে তাহলে সে ক্ষেত্রে সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সানা পড়বে তারপর ফাতিহা ও সূরা মিলাবে এবং এভাবে নামাজ নিজের পূর্ণ করবে।

এরপর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর মিলবে আর যদি দুই রাকাত নামাজ না পাই তাহলে সে ক্ষেত্রে প্রথম রাকাতে তাকে নিয়মমাফিক থানা পড়তে হবে তারপর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়বে এবং প্রথম রাকাতে ছানা ফাতিহা ও অন্যান্য সূরা মিলিয়ে নিয়মমাফিক নামাজ পূর্ণ করবেন। আর যদি কোন ক্ষেত্রে তিন রাকাতই নামাজ না পায় তাহলে অবশ্যই প্রথম দুই টাকা পূর্বের মতো পড়বে আর যদিও রাকাতে শুধু খাটিয়া পড়বে কিন্তু অন্য কোন সূরা পড়বেনা। এভাবেই মাসবুক ব্যক্তি তার নামাজ পূর্ণ করবে। 

শেষ কথাঃ সালাতে ফরজ  ছুটে গেলে তার বিধান কি - তিন রাকাত নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

আশা করি আপনি আমার আর্টিকেলটি পড়ে আজকে নামাজের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। সালাতে ফরজ  ছুটে গেলে তার বিধান কি,  তিন রাকাত নামাজ ছুটে গেলে করণীয়,  মাসবুক সালাতে করণীয়, নামাজের ওয়াজিব সমূহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমি আমার আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ওপরে উল্লেখিত সকল বিষয়ে জ্ঞান রাখা একজন মুসলিমের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ নামাজ বেহেস্তের চাবি এবং সঠিকভাবে নামাজ আদায় না করলে নামাজ কবুল হয় না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Rajrafi.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url