শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা

 

আপনারা অনেকে হয়তো জানেননা শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা, উৎপাদনের কৌশল এবং শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ। আপনাদেরকে শীতকালীন সবজি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা দেওয়ার জন্য আজকের এই আর্টিকেল। এর মাধ্যমে আপনারা  শীতকালের সবজি চাষের তালিকা জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা।
শীতের মৌসুমে আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের নতুন নতুন সবজি চাষ করা হয়। যার বহুরকম পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং আমদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা সম্পর্কে যদি আমাদের কিছু জ্ঞান থাকে, তাহলে আমরা সেই শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা অনুসরণ করে শীতের মধ্যে বেশ মজার মজার ভিটামিন সমৃদ্ধ সুস্বাদু সব সবজি চাষ করতে পারবো।

পেজ সূচিপত্র: শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা

শীতকালীন সবজি কি

রবি বা শীত মৌসুমে আমরা যে সবজি পাই তা হলো শীতকালীন সবজি বা ফসল। শীত মৌসুমের শুরুতে বা শীত মৌসুম শুরুর কয়েক মাস আগে চাষ করা শীতকালীন সবজির প্রথম জাতগুলোকে শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা বলা যেতে পারে। অনেক কৃষক প্রথম দিকে চাষ করা শীতকালীন সবজি সংগ্রহ করে অতিরিক্ত বাজারমূল্য পেয়ে এবং পরিবারের চাহিদা মেটাতে উদ্বৃত্ত সবজি বাজারজাত করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়াও কৃষকেরা নিজের পরিবারের পুষ্টিসম্পূর্ণ খাবার নিশ্চিত করেছেন।

শীতকালীন সবজি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী

সবজি ভিটামিন এবং খনিজগুলির অন্যতম খাদ্য উৎস। শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা সম্পর্কে জানার আগে এর উপকারিতা জানতে হবে। মূলত ভিটামিন ও খনিজগুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আমাদের শরীরকে খাদ্যের শর্করা, আমিষ, চর্বি ইত্যাদি ব্যবহার করতে সহায়তা করে। ফলে কোনো প্রকার অতিরিক্ত কোনো কিছু আমাদের শরীরের থাকেনা। অতএব বলা যায়, সবজি আমাদের শরীর রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
বছরের সবজি এবং ফল প্রায় সবসময়ই থাকে। তবে বাংলাদেশে শাকসবজি ও ফলের জন্য শীতকাল সবচেয়ে ভালো মৌসুম। শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা থেকে এসব মৌসুমি সবজি বা ফল খেলে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টির চাহিদা, বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেল সহজেই পূরণ করা সম্ভব। তাছাড়া শীতকালে চারদিকের আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকায় শাকসবজি ও ফলমূল সবসময় সতেজ হয়ে থাকে। ফলে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালীন শাকসবজি ও ফলের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি থাকে।

শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা

কোমল ও তাজা অবস্থায় আগাম সবজি ফসল সঠিকভাবে সংগ্রহ ও বাজারজাত করার ব্যবস্থা করতে হবে। দেরিতে ফসল তোলার ফলে উৎপাদিত সবজির গুণগত মান কমে যায়। খুব অল্প বয়সে ফসল কাটার ফলে ফলন অনেক কমে যায়। অতএব, সবজি ফসল তখনই কাটা উচিত যখন এই ফসলগুলি তাদের ব্যবহারের সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে। উপযুক্ত পর্যায়টি তরুণ বা পরিপক্ক নয় এবং ফসল কাটার পর্যায়টি ক্রেতা বা ভোক্তার পছন্দ এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। এখন চলুন দেখে নেই শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা।
  • টমেটো, বেগুন, শসা, কুমড়া এই সবজি গাছ থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে আলাদা করতে হবে।
  • চারা পাতলা করার সময় লাল বাঁধাকপি, পালংশাক ইত্যাদি ছোট গাছ হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে।
  • পালংশাক, লালশাক, মুলাশাক সংগ্রহের সময় সম্পূর্ণ গাছ উপড়ে সংগ্রহ করতে হবে।
  • সবজি হিসাবে ব্যবহারের জন্য, পুইশাক এবং লাউয়ের ডগা ছাঁটাই বা ছাঁটাই করার সময় গাছের অংশগুলি সংগ্রহ করার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
  • মূলার বীজ বপনের ২০-২৫ দিন পরে সংগ্রহ করা যেতে পারে। পুরুভাবে রোপণ করলে শাকসবজির জন্য ২০ দিন এবং মুলার জন্য ৪০ দিন পর ফুল আসা পর্যন্ত ফসল কাটা যায়।
  • মটরশুটি ফুল আসার ২০-২৫ দিন পরে কাটা যায়। অঙ্কুর সম্পূর্ণরূপে বড় হয়ে গেলে, সামান্য ফুলে যাওয়ার পর এর বীজ শুঁটি সংগ্রহ করতে হবে। যাইহোক, অতিরিক্ত পাকা স্প্রাউটগুলি তাদের কোমলতা এবং স্বাদ হারায় যখন ফাইবারগুলি বিকাশ লাভ করে।

শীতকালীন সবজি চাষের সতর্কতা

শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা অনুসরণ করার পাশাপাশি আপনাকে অনেক এর সতর্কতাও মেনে চলতে হবে। হাত পাকিয়ে সবজি তোলা যাবে না, এতে মাদার প্ল্যান্টের ক্ষতি হয়। মোচড়ের কারণে সৃষ্ট ক্ষত রোগের আক্রমণের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে। তাই ক্ষতি এড়াতে ধারালো ছুরি বা ক্লিপার দিয়ে সংগ্রহ করা উচিত। ফসল সংগ্রহ করে ফসল তোলার পাত্রে রাখতে হবে। শাকসবজি তোলা থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়াকে বিপণন বলে। আর বিষয়গুলো লক্ষ্য করলে সঠিক ও সুন্দরভাবে বাজারজাতকরণ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সবজির ক্ষতির পরিমাণ নূন্যতম পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে।

শীতকালীন সবজির উপকারিতা

শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা থেকে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বাঁধাকপি, লাল বাঁধাকপি, পালংশাক, মুলা, শালগম, মটরশুটি, টমেটো, পেঁয়াজ পাতা, লাউ, ব্রকলি, মটরশুঁটি, গাজর, ধনেপাতা ইত্যাদি বাজারে দেখা যায়। পুষ্টিবিদদের মতে, শীতের সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ও ভিটামিন।
  • ফুলকপি: ফুলকপিতে এমন কিছু উপাদান আছে যা কিডনির পাথর ও ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। ফুলকপিতে কোনো চর্বি নেই। ফুলকপি কোলেস্টেরল মুক্ত যা শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য বিশেষ উপকারী।
  • বাঁধাকপি: বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন-সি এবং প্রচুর আঁশ। হাড় মজবুত ও সুস্থ রাখতে এবং ওজন কমানোর জন্য বাঁধাকপি অতুলনীয়। তাছাড়া বাঁধাকপি আলসার প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
  • লালশাক: পুষ্টিগুণের দিক থেকে লালশাক ও পালংশাক অন্যান্য সবজির চেয়ে কিছুটা এগিয়ে। প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকে প্রায় ৩৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। লালশাক অন্যান্য সবজির তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিকর।
  • পালংশাক: পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড, যা আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য। আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ ছাড়াও আমাদের শরীরে হৃদরোগ ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে পালং শাক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • মটরশুঁটি: মটরশুঁটিতে অনেক পরিমাণে ক্যালোরি বিদ্যমান। প্রতি ১০০ গ্রামে ১২৫ কিলোক্যালরি রয়েছে। মটরশুঁটি সবজির একটি বড় উৎস। মটরশুঁটিতে আমিষ ছাড়াও প্রোটিন ও ফাইবার থাকে। মটরশুঁটিতে থাকা ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং অনেকাংশে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমায় এবং পাকস্থলী ও প্লীহাকে শক্তিশালী করে। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। অপুষ্টি দূর করে এবং শিশুদের পুষ্টি যোগায়।
  • টমেটো: রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে উন্নত দেশের মানুষ টমেটো এবং টমেটো জাতীয় খাবার। ক্যালরি সমৃদ্ধ টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, যা হাড় ও দাঁত মজবুত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • গাজর: গাজর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। শীতকালীন সবজির মধ্যে থেকে চোখ ও দাঁত রক্ষা, লিভার সুস্থ রাখতে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে গাজর খাওয়া যেতে পারে। এতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ এবং পটাশিয়াম। গাজরে উপস্থিত প্রয়োজনীয় ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। শরীরের ওজন কমাতে এবং সুস্থ ত্বক পেতে বেশি করে গাজর খান।
  • ব্রোকলি: ব্রোকলি আমাদের দেশের একটি নতুন শীতকালীন সবজি। যা দেখতে অনেকটা সবুজ ফুলকপির মতো। ব্রোকলি অন্যান্য পুষ্টির মধ্যে আয়রন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। এই সবজি চোখের রোগ এবং অস্টিওপরোসিসের মতো উপসর্গ থেকে মুক্তি দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ধনেপাতা: ধনেপাতা এখন সারা বছর পাওয়া যায় তবে এটাকে শীতকালীন সবজি হিসেবেই ধরা হতো। ধনিয়া সরাসরি সালাদ হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে এবং ফলিক অ্যাসিড রয়েছে, যা আমাদের ত্বকের জন্য অপরিহার্য। ধনিয়া ভিটামিন আমাদের ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, চুল পড়া রোধ করে, হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করে এবং মুখের ভিতরের নরম টিস্যুকে রক্ষা করে।
  • আমলকী: আমলকীকে ভিটামিন সি এর রাজা হিসেবে পরিচিত দেওয়া হয়। আমলকি ত্বকের সুরক্ষা, মাড়ি মজবুত এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • আপেল: সারা বছর পাওয়া গেলেও শীতকালে আপেল বেশি পাওয়া যায়। এতে রয়েছে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি১, ভিটামিন-বি১২, ভিটামিন-বি৬ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আপেল কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর।
  • সফেদা: সফেদা শীতের আরেকটি ফল। এই ফলটি একসময় আমাদের দেশে খুব একটা পরিচিত ছিল না। কিন্তু বর্তমানে এই ফলটি পুষ্টিগুণের কারণে প্রিয় ফলের তালিকায় ঢুকে পড়েছে। ক্যানসার বিরোধী, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ, কিডনির সুরক্ষা এবং সতেজ ত্বক ছাড়াও কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সফেদা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সফেদায় আছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, কপার, আয়রন ও ফাইবার।
  • বেদেনা: সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং রসালো শীতকালীন ফল হল বেদানা বা আনার, অনেকে একে ডালিম বলে। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-সি। বেদেনার রস কুষ্টরোগ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী

শেষ কিছু কথা

ইতিমধ্যে আমরা শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা ও শীতকালীন সবজির উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করলাম। শীতকালীন সবজি যেমন মজাদার ও উপকারী ঠিক তেমনই এর সংরক্ষণে যত্নশীল হতে হবে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে এবং শরীরে রক্তকণিকা বা প্লেটলেট তৈরিতে শীতকালীন সবজির ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই এর অভাব পূরণ করতে বেশি করে শীতের শাকসবজি খান। শীতের সবজিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে। এটি চুল পড়া রোধ করে এবং চুল পড়া রোধ করে।
আশা করি আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা। এমন আরো তথ্যসম্পর্ণ এবং কম্পিউটার ও টেকনোলজি রিলেটেড টিপস আর ট্রিকস পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইট অর্ডিনারি আইটিতে। এতোক্ষন মন দিয়ে আমাদের আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।২৬১৪২

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Rajrafi.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url